গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয় - গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে পশু পালনের ক্ষেত্রে গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয় ও কি কি প্রদ্ধতি রয়েছে তৈরির করার। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে ও কত টাকার পদক্ষেপ নিতে হবে। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আজকের দিনে মানুষ ব্যবসা করে বড় বড় ব্যবসিক হয়ে ওঠেছে তার পরিশ্রমের বিনিময়ে। কেননা আপনি মন দিয়ে ব্যবসা করলে সব ব্যবসা চলবে। তার আগে আপনার ব্যবসার প্রতি কোনো জ্ঞানী মানুষের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।
তাই আসুন জেনে রাখি, গরু ব্যবসা করার ইচ্ছা থাকলে এই গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয় ও কি কি প্রদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে ও কেমন করে করতে হবে। নিম্নে বিস্তারিত............?
গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয়ঃ
প্রথমেই খামার শুরু করার আগে ঠিক করতে হবে আপনি দুধের খামার করবেন নাকি গরু মোটাতাজাকরণ করবেন। এই সিদ্ধান্তের ওপরই পুরো খামারের প্ল্যান নির্ভর করে আপনার সুচিন্তার উপরে। এরপর প্রয়োজন হবে উপযুক্ত জায়গা। জায়গাটি উঁচু, শুকনো, বাতাস চলাচল ভালো এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা খুব জরুরি। গরুর ঘর এমনভাবে বানাতে হবে যেন রোদ–বৃষ্টি সরাসরি না লাগে, আবার বাতাস চলাচল ঠিক থাকে।
এরপর কিছু টাকা জমিয়ে ভালো জাতের গরু নির্বাচন করতে হবে। দুধের জন্য হলে ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল বা দেশি-ক্রস জাত ভালো। মোটাতাজাকরণের জন্য সুস্থ দেশি গরু বা ক্রস জাত বাছাই করা যায়। গরু কেনার সময় বয়স, দাঁত, চোখ, পা ও শরীরের গঠন ভালো করে দেখা জরুরি। খাবারের বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গরুকে প্রতিদিন সবুজ ঘাস, শুকনো খড়, দানাদার খাদ্য ও পরিষ্কার পানি দিতে হবে। সঙ্গে লবণ ও মিনারেল মিক্স দিলে গরু সুস্থ থাকে এবং উৎপাদন বাড়ে।
গরুর খামার করতে কত টাকা লাগেঃ
গরুর খামার করতে কত টাকা লাগবে তা মূলত খামারের আকার, গরুর সংখ্যা আর খামারের ধরন (দুধের খামার নাকি মোটাতাজাকরণ)–এর ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে বাংলাদেশে ছোট পরিসরে ২–৩টি গরু দিয়ে খামার শুরু করতে প্রায় ১.৫ থেকে ২.৫ লাখ টাকা লাগে। এর মধ্যে গরু কেনা, ঘর তৈরি বা মেরামত, খাবার, ওষুধ ও প্রাথমিক পরিচর্যার খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদি ৫–১০টি গরু দিয়ে মাঝারি খামার করতে চান, তাহলে খরচ যেতে পারে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। বড় পরিসরে বাণিজ্যিক খামার করতে চাইলে খরচ আরও বেশি হবে। তবে ঠিকভাবে পরিকল্পনা আর যত্ন নিলে কয়েক মাসের মধ্যেই খরচ উঠে এসে লাভ শুরু হতে পারে আপনার।
গরু পালন পদ্ধতিঃ
গরু পালন পদ্ধতি সহজ হলেও সঠিক নিয়ম না মানলে লাভ পাওয়া কঠিন হয়ে যায় ও পালন প্রদ্ধতি কঠিন হয়ে পরে। গরু পালনের জন্য প্রথমেই পরিষ্কার, শুকনো ও বাতাস চলাচল করে এমন ঘর তৈরি করতে হবে, যেন গরু আরাম পায় এবং রোগ কম হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে সবুজ ঘাস, শুকনো খড় ও দানাদার খাবার দিতে হবে, আর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি রাখা খুব জরুরি।
গরুর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নিয়মিত টিকা ও কৃমিনাশক দিতে হবে এবং গোবর প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। দুধের গরু হলে নির্দিষ্ট সময় মেনে দুধ দোহন করতে হবে, এতে দুধের পরিমাণ বাড়ে। অসুস্থ গরু আলাদা করে যত্ন নেওয়া ও ভেটেরিনারি পরামর্শ নেওয়াও গরু পালনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মধ্য দুটো গরু আপনার জন্য খুবই ভাল হতে পারে।
যেমনঃ দেশি গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও খরচ কম হয়। আরেকটা হলো সংকর গরু উন্নত জাতের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। এই গরু আকারে বড় হয় ও এর দুধও বেশি পাওয়া যায়। তাই ঠিকভাবে যত্ন নিলে গরু পালন লাভজনক ও টেকসই হয়ে ওঠে লাভবান। স্বচ্ছ
কিভাবে গরুর খামার করলে লাভবান হওয়া যায়ঃ
গরুর খামার থেকে লাভবান হতে হলে শুধু গরু রাখলেই হবে না তার সাথে সাথে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে স্মার্ট প্ল্যান + নিয়মিত যত্ন এই দুইটাই আসল গেম চেঞ্জার। প্রথমে ঠিক করতে হবে আপনি দুধের খামার করবেন নাকি মোটাতাজাকরণ খামার করবেন। তারপর এলাকার পরিবেশ ও বাজেট অনুযায়ী ভালো জাতের, সুস্থ গরু নির্বাচন করতে হবে।
গরুকে নিয়মিত ব্যালান্সড খাবার (সবুজ ঘাস, খড়, দানাদার খাদ্য) আর পরিষ্কার পানি দিলে দুধ ও ওজন দুটোই ভালো হয়। খরচ কমাতে নিজে ঘাস চাষ করুন, স্থানীয় খাবার গরুকে খাবাবেন ও আজেবাজে খাবার খাওয়ানো থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলা খুব দরকার। রোগবালাই ঠেকাতে সময়মতো টিকা ও কৃমিনাশক দেওয়া জরুরি, কারণ একবার গরু অসুস্থ হলে লাভ একদম কমে যায়।
পাশাপাশি দুধ বা গরু বিক্রির জন্য আগে থেকেই নিশ্চিত বাজার ঠিক করে রাখলে দাম ভালো পাওয়া যায়। সংক্ষেপে বললে, ঠিক পরিকল্পনা, খরচ কন্ট্রোল আর নিয়মিত যত্ন আধুনিক জিনিস দ্বারা এই চারটা ঠিক থাকলেই গরুর খামার থেকে সত্যিকারের লাভ করা যায়।
একটি গরুর দৈনিক খরচ কত টাকাঃ
একটি গরুর দৈনিক খরচ সাধারণত খাবার, পরিচর্যা ও ওষুধের খরচ মিলিয়ে গড়ে ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়। দুধের গরু হলে প্রতিদিন সবুজ ঘাস, খড়, দানাদার খাবার ও মিনারেল মিক্স দিতে হয়। এখানেই মূল খরচটা বেশি হয়। যদি নিজে ঘাস চাষ করা যায়, তাহলে খরচ কিছুটা কমে আসে। এছাড়া মাঝে মাঝে ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশকের খরচ যোগ হলেও সেটা মাসে ভাগ করলে দৈনিক খুব বেশি পড়ে না। তাই বলা যায়, গরুর জাত, দুধ উৎপাদন ও খাবারের মান অনুযায়ী দৈনিক খরচ কম–বেশি হতে পারে।চ
একটি গরুর জন্য কত ফুট জাইগা লাগেঃ
গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয় তা নির্ভর করে গরুর উপর। একটি গরুর জন্য সাধারণভাবে ৩ফুট চওড়া ও ৫-৭ ফুট লম্বা জাইগা লাগে। একটি মান-সম্পূর্ণ খামারে জায়গা নিতে হলে আপনাকে ৪৫ থেকে ৬০ বর্গফুট জায়গা দরকানা হবে। এর মধ্যে গরুর বসা, দাঁড়ানো, খাওয়ার জায়গা আর চলাচলের সামান্য স্পেস অন্তর্ভুক্ত থাকে। দুধের গরু বা বড় জাতের গরুর জন্য জায়গা একটু বেশি ভালো—প্রায় ৬০ বর্গফুট, আর ছোট বা দেশি গরুর জন্য ৪৫–৫০ বর্গফুট হলেই ভাল হয়। যদি গরুকে বেশি আরাম দিতে চান এবং পরিষ্কার রাখা সহজ করতে চান, তাহলে জায়গা একটু বেশি রাখাই বেস্ট।
গরুর খাদ্য তালিকাঃ
গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয় ও গরুর কাদ্য তালিকা সমন্ধে জানুন? গরু সুস্থ রাখা, দুধ ও ওজন ভালো পাওয়ার জন্য সঠিক খাদ্য তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে একটি গরুর জন্য সহজ ও ব্যালান্সড দৈনিক খাদ্য তালিকা দেওয়া হলোঃ
- গরুর খাদ্য তালিকাঃ
- সবুজ ঘাস
- ন্যাপিয়ার ঘাস
- জার্মান ঘাস
- পাড়া ঘাস ( প্রতিদিন গড়ে ২০–২৫ কেজি )
- শুকনো খড়
- ধানের খড় ( প্রতিদিন ৪–৬ কেজি )
- ভাঙা ভুট্টা
- গম
- খনিজ ও লবণ
- মিনারেল মিক্স
- চালের কুঁড়া
- সরিষার খৈল / সয়াবিন মিল ( প্রতিদিন ৩–৫ কেজি (দুধের পরিমাণ অনুযায়ী)
- পরিষ্কার পানি ( প্রতিদিন ৫০–১০০ গ্রাম )
- গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ
- খাবার সবসময় নির্দিষ্ট সময় মেনে দিন
- হঠাৎ খাবার পরিবর্তন করবেন না
- পচা বা ভেজা খাবার এড়িয়ে চলুন
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন পশু পালনের ক্ষেত্রে গরুর খামার কিভাবে শুরু করতে হয় ও কি কি করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url