কবুতর খাবার না খেলে কি করণীয় - কবুতর পালন পদ্ধতি? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে পশু-পালনের জন্য কবুতর খাবার না খেলে কি করণীয় ও কি কি করা উচিত তাদেরকে ঠিক করার জন্য। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে কবুতর পালন পদ্ধতি কি ও কিভাবে কবুতর পালন করতে হয়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
পশু-পালনের করার জন্য আপনাকে কিছু আগে পদক্ষেপ নিতে হবে। পশু-পালনের মধ্য সব থেকে সেন্সিটিভ হলো এই কবুতর পোশা। এই কবুতর পশলে আপনাকে তাদেরকে নিজের মতো করে ভালবাসতে হবে। এই কবুতর মানুষের একটা ফিলিংন্স হয়ে থাকে।
![]() |
| কবুতর-খাবার-না-খেলে-কি-করণীয় |
কবুতর খাবার না খেলে কি করণীয়ঃ
কবুতর খাবার না খেলে প্রথমেই দুশ্চচিন্তাই না পড়ে আসল কারণটা বুঝতে হবে। সাধারণত পরিবেশ পরিবর্তন, হঠাৎ ভয় পাওয়া, অসুস্থতা, পানি নোংরা থাকা বা খাবার পরিবর্তনের কারণে কবুতর খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। এমন অবস্থায় কবুতরকে আলাদা করে পরিষ্কার ও শান্ত জায়গায় রাখতে হবে, যাতে ওর স্ট্রেস কমে ও তাদের শরীর স্থির করে। তারপর পরিষ্কার পানির সাথে আপনি রাইস স্যালাইন কিংবা নরম খাবার যেমন, ভিজানো গম, বীজ, শস্য, ভুট্টা, চাল বা মিশ্র দানাদার খাবার দিতে পারেন।
যদি ঠান্ডা, ডায়রিয়া বা প্যারাসাইটের মতো কোনো রোগের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ভেটেরিনারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেক সময় শরীরে পানিশূন্যতা থাকলেও কবুতর খাবার খায় না, তাই ওর পানি খাওয়ার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠিকভাবে যত্ন নিলে বেশিরভাগ সময় কবুতর আবার স্বাভাবিকভাবে খাবার খাওয়া শুরু করে।
কবুতর পালন পদ্ধতিঃ
কবুতর পালন করতে হলে আগে তাদের জন্য নিরাপদ, পরিষ্কার ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা দরকার। প্রথমেই একটি খোপ বা ঘর বানাতে হবে যেখানে আল বাতাস চলাচল ভালো হবে এবং রোদ আসতে পারে। খোপটি শুকনো রাখতে হবে, মাসে একবার জীবাণুনাশক স্প্রে করা, এবং ছানা বের হওয়ার সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। কোনো কবুতর খেতে না চায় বা ঝিমায়, ডানা নামিয়ে রাখে তাহলে দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে।
কারণ ভেজা জায়গা থেকে রোগ ছড়ায়। প্রতি জোড়া কবুতরের জন্য আলাদা বাসা বা বাক্স রাখা ভাল, এতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম পাড়ে ও ছানা লালন করতে পারে। খাবারের ক্ষেত্রে কবুতরকে নিয়মিত দানাদার খাবার যেমন গম, ভুট্টা, চাল, সজিনা বীজ, সরিষা, মসুর বা মিক্সড খাবার দিতে হয়। খাবারের সঙ্গে পরিষ্কার পানি সবসময় খোপে রাখতে হবে। সপ্তাহে ২–৩ দিন ভিটামিন ও মিনারেল মিক্স দিলে কবুতর গুলো আরও সুস্থ থাকে এবং ডিম পাড়ার ক্ষমতা বাড়ে।
কবুতরের রোগ ও ঔষধের নামঃ
কবুতর পালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগ সম্পর্কে ধারণা রাখা আর সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ ব্যবহার করা। নিচে কবুতরের সাধারণ রোগ ও ব্যবহৃত ওষুধের নাম সহজভাবে দেওয়া হলোঃ
- কবুতরের সাধারণ রোগ ও ঔষধের নামঃ
- পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া)
- রাণীক্ষেত
- প্যারাটাইফেড
- হেপাটাইটিস
- পিজিয়ন পক্স
- ককসিডিওসিস ও
- কৃমি
- সর্দি-কাশি
এই রোগ যদি আপনি কবুতরের মধ্য দেখতে পান। তাহলে আপনি Aldex Syrup বা Alben Syrup (কৃমির জন্য), Doxycycline (ব্যাকটেরিয়া/চামড়ার সংক্রমণ), এবং নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ খাওয়াতে পারেন। যাতে কবুতর তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে ওঠে।
কবুতরের কোন কোন রোগ হয়ঃ
কবুতরের নানা ধরনের রোগ হতে পারে, বিশেষ করে ঠিকমতো যত্ন না নিলে বা পরিবেশ নোংরা থাকলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নিচে কবুতরের সাধারণ ও পরিচিত রোগগুলোর নাম সহজভাবে দেওয়া হলো দেখে নিনঃ
- ডায়রিয়া (পাতলা পায়খানা)
- সর্দি–কাশি ও শ্বাসকষ্ট
- প্যারামিক্সোভাইরাস (PMV) রোগ – ঘাড় বেঁকে যাওয়া
- পক্স রোগ – ঠোঁট, চোখ, পায়ে গুটি ওঠা
- কৃমি রোগ – পেটের কৃমি, ওজন কমে যাওয়া
- চোখ ওঠা (কনজাঙ্কটিভাইটিস)
- ট্রাইকোমোনাস বা মুখের ঘা রোগ
- স্যালমোনেলা (প্যারাটাইফয়েড)
- ডানা ঝুলে যাওয়া বা পক্ষাঘাত
- চর্মরোগ ও বাহ্যিক পরজীবী (উকুন, মাইট)
কবুতরের ঠিক মত যত্ন না নিলে এই সব রোগ দেখা দিতে পারে। তাই আগে থেকে সাবধান হয়ে জান।
কবুতরকে ই ক্যাপ খাওয়ানোর নিয়ম কিঃ
কবুতরকে ই-ক্যাপ (Vitamin E Capsule) খাওয়ানোর নিয়ম ঠিকভাবে জানলে ডিম, বাচ্চা সব সময় ভাল থাকে। ১টি ই-ক্যাপ = ১০–১২টি কবুতরের জন্য যথেষ্ট। মনে রাখবেন সরাসরি পুরো ক্যাপ এক কবুতরকে দেওয়া যাবে না। সবার আগে ই-ক্যাপ কেটে ভেতরের তরল বের করে সেই তরল ১ লিটার পরিষ্কার পানিতে মিশাও।
মেশানোর পর এই পানি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কবুতরকে পান করতে দাও। পরদিন নতুন পানি দেবে (পুরোনো মিশ্রণ রাখবে না। এইভাবে টানা ৫–৭ দিন খাওয়ালেই যথেষ্ট।এইভাবে আপনি আপনার কবুতরকে ই ক্যাপ খুব সহজে খাওয়াতে পারবেন।
কবুতর উড়তে না পারলে কি করণীয়ঃ
কবুতর উড়তে না পারলে প্রথমেই ভয় না পেয়ে কারণটা খুঁজে বের করা খুব জরুরি। সাধারণত ডানা আঘাত পাওয়া, দুর্বলতা, ভিটামিনের ঘাটতি, হাড়ের, হজমের সমস্যা, বা কোনো রোগের কারণ আছে"না সেটি আগে ঘুতিয়ে দেখুন যে কেন কবুতর উড়তে পারচ্ছে না। এমন অবস্থায় কবুতরকে আলাদা করে শান্ত ও নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে, যাতে সে আরও আঘাত না পায়। আপনি চাইলে ডানায় কোনো কাটা, ফোলা বা বাঁকা আছে কি না সেটা ভালো করে দেখা নিবেন।
নিয়মিত পরিষ্কার পানি, পুষ্টিকর খাবার আর ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও ক্যালসিয়াম দিলে অনেক সময় দ্রুত উন্নতি দেখা যায়। যদি ২–৩ দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয় বা ডানায় মারাত্মক সমস্যা মনে হয়। তাহলে দ্রুত একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।
কবুতর কত বছর বাঁচেঃ
কবুতর সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। আগে দেখতে হবে যে সে কবুতর গৃহপালিত নাকি বন্য। যদি তাদের ঠিকভাবে যত্ন ও সঠিক পরিবেশ দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভালো পরিচর্যা, নিয়মিত খাবার, পরিষ্কার খোপ আর রোগমুক্ত পরিবেশে কবুতর ২০ বছর পর্যন্তও বেঁচে থাকতে পারে। তবে খোলা পরিবেশে বা ঠিকভাবে যত্ন না পেলে রোগ, শিকারি প্রাণীর আক্রমণ ও খাবারের অভাবে কবুতরের আয়ু ৫–৭ বছরেও নেমে আসতে পারে।
কবুতর দিনে বাচ্চা দেয়ঃ
কবুতর দিনে দিনে বাচ্চা দেয় না, কারণ কবুতরের প্রজনন প্রক্রিয়াটা একটু ধীরগতির। সাধারণত একটি মাদী কবুতর একবারে ১ থেকে ২টি ডিম পাড়ে এবং সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে প্রায় ১৭–১৮ দিন। তারপর বাচ্চাগুলো বড় হতে আরও কয়েক ১৮-২০ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ কবুতর প্রতিদিন বাচ্চা দেয় এই ধারণা ভুল। তবে ভালো যত্ন, খাবার আর নিরাপদ পরিবেশ পেলে একটি জোড়া কবুতর বছরে একাধিকবার ডিম পেড়ে অনেকগুলো বাচ্চা দিতে পারে।
কবুতর কত বছর পর্যন্ত ডিম দেয়ঃ
কবুতর সাধারণত ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দিতে পারে, তবে এটা নির্ভর করে তার জাত, খাবার, পরিবেশ আর যত্নের উপর। একটা কবুতর জতদিন বাঁচে ততদিন সে ডিম দিতে পারে। সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় জীবনের ১ম থেকে ৫ম বছর। এই সময়টায় কবুতর সবচেয়ে বেশি সুস্থ ও ভাল থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে ডিম দেওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে। যদি কবুতরকে পুষ্টিকর খাবার, পরিষ্কার পরিবেশ আর নিয়মিত যত্ন দেওয়া যায়, তাহলে সে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন পশু-পালনের জন্য কবুতর খাবার না খেলে কি করণীয় কাজ করতে হবে। ও তার সাথে সাথে এটাই জানলেন যে কবুতর পালন পদ্ধতি কি ও কেমন হয়।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষর সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )


স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url