ছাগলের খামার করার নিয়ম - ছাগল পালন প্রদ্ধতি? বিস্তারিতভাবে জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে ছাগলের খামার করার নিয়ম গুলো কি কি হয়ে থাকে ও কিভাবে করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে ছাগল পালন প্রদ্ধতি কেমন করে করতে হয়, ও কখন করতে হয়। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আজকের দিনে দেখা জায় যে অনেক মানুষ আছে যারা আজ ব্যবসা করে কোটিপ্রতি হয়ে গেছে। ব্যবসা যেটাই হোক না কেন আগে আপনাকে ব্যবসার প্রতি ধারণা নিতে হবে। আপনি যদি ছাগল পালন করতে চান তাহলে ছাগলের প্রতি জ্ঞান ও ব্যবসার ধারণা নিতে হবে।

তাই আসুন জেনে রাখি যে, ছাগলের প্রতি ব্যবসা করতে চাইলে ছাগলের খামার করার নিয়ম কি ও কিভাবে করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে ছাগল পালন প্রদ্ধতি কেমন করে করতে হয়। নিম্নে বিস্তারিত......? 

ছাগলের খামার করার নিয়মঃ

ছাগলের খামার একটি লাভজনক ও বহুমুখী সকল ব্যবসা। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে সহজেই সফল খামার গড়ে তোলা সম্ভব। নিম্নে দেখুন?

  • পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনাঃ

  1. লক্ষ্য নির্ধারণ: দুধ, মাংস বা প্রজননের জন্য খামার করতে চান তা ঠিক করুন।
  2. স্থান নির্বাচন: শুকনা, উঁচু ও নির্মল পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করুন।
  3. আবাসন: ছাগলের সংখ্যা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলযুক্ত শেড তৈরি করুন। প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের জন্য কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।
  4. প্রাথমিক বিনিয়োগ ও বাজেট: খামার স্থাপন, ছাগল ক্রয়, খাদ্য, ওষুধপত্র ও পরিচর্যার জন্য বাজেট নির্ধারণ করুন।

  • ছাগলের জাত নির্বাচনঃ

  1. দুধের জন্য: বিটাল, জামুনাপারি, সannen (বারবারি জাত)।
  2. মাংসের জন্য: ব্ল্যাক বেঙ্গল, খাসি, বোয়ার।
  3. সেকেন্ডারি তথ্যসূত্র: আপনার অঞ্চলের জলবায়ু ও চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে উপযোগী জাত বাছাই করুন।

  • খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

  1. হাইজ ব্যবস্থা: সবুজ ঘাস (নেপিয়ার, প্যারা), খড়, দানাদার খাবার (ভুট্টা, গম ভাঙা, খৈল) ও খনিজ লবণ দৈনিক সরবরাহ করুন।
  2. পানি: পরিষ্কার ও তাজা পানি অবারিতভাবে প্রদান করুন।
  3. আহ্লাদী খাদ্য সময়সূচী: দিনে ২-৩ বার খাবার দিতে হবে। দানাদার খাবার কম এবং আঁশজাতীয় খাবার বেশি দেওয়া উচিত।

  • ছাগলের স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ

  1. টিকা দেওয়া: ক্ষুরা রোগ, পিপিআর (ঢেঁকিলা রোগ), ব্রুসেলোসিস ইত্যাদির নিয়মিত টিকাদান করুন।
  2. কৃমিনাশক: প্রতি ৩-৪ মাস পরপর কৃমিনাশক ওষুধ দিন। 
  3. রোগ নিরীক্ষণ: খাদ্য গ্রহণ, আচরণ ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
  4. প্রাথমিক চিকিৎসা কিট: জ্বর, ডায়রিয়া, ক্ষত চিকিৎসার প্রাথমিক ওষুধ ও সরঞ্জাম রাখুন।

  • ছাগলের বাচ্চা ব্যবস্থাপনাঃ

  1. উপযুক্ত বয়সে (৮-১০ মাস) প্রজননের জন্য উপযুক্ত ছাগী ও পাঁঠা নির্বাচন করুন।
  2. গর্ভবতী ছাগীর বিশেষ যত্ন নিন: আলাদা স্থান, পুষ্টিকর খাবার ও টিকা দিন।
  3. প্রতিটি ছাগলের স্বাস্থ্য, টিকা, প্রজনন, খরচ ও আয়ের রেকর্ড সংরক্ষণ করুন। এটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।
  4. বাচ্চা প্রসবের সময় পরিচ্ছন্নতা ও উষ্ণতা নিশ্চিত করুন।

  • বিপণন ও বিক্রয়ঃ

  1. স্থানীয় হাট, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা সরাসরি খুচরা ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
  2. দুধ বা মাংসের প্রসেসিং বা ভ্যালু এডেড পণ্য (যেমন: দই, পনির) তৈরির মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন।

ছাগলের খামারে রোগ-বালাই দ্রুত ছড়ায়, তাই নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা ও কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা মেনে চলুন। আধুনিক চর্চা ও টেকসই পদ্ধতি অনুসরণ করে লাভ বাড়ানো সম্ভব।

ছাগল পালন প্রদ্ধতিঃ

ছাগল পালন একটি লাভজনক ও টেকসই কৃষি কার্যক্রম। সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে স্বল্প পুঁজিতেও সফলতা পাওয়া সম্ভব। তার উদাহরণঃ

  • প্রাথমিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিঃ

  1. লক্ষ্য নির্ধারণ: দুধ, মাংস, বা প্রজনন – কোন উদ্দেশ্যে খামার করবেন?
  2. স্থান নির্বাচন: শুষ্ক, উঁচু, বন্যামুক্ত, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত স্থান। শহর বা বাসার কাছ থেকে দূরে রাখুন।
  3. খামার ডিজাইন: প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ছাগলের জন্য ১০-১২ বর্গফুট জায়গা দিন। মেঝে শুকনা ও ঢালু থাকা দরকার যাতে পানি জমে না থাকে।

  •  ছাগলের জাত নির্বাচনঃ

  1. দুধের জন্য: বিটাল, জামুনাপারি, সানেন, বারবারি।
  2. মাংসের জন্য: ব্ল্যাক বেঙ্গল, খাসি, বোয়ার।
  3. উভয়ের জন্য: বিটাল-ব্ল্যাক বেঙ্গল সংকর।

  • খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

  1. হাইজ (আঁশজাতীয় খাবার): সবুজ ঘাস (নেপিয়ার, প্যারা, দেশি ঘাস), খড়, ডালপালা।
  2. কনসেন্ট্রেট (দানাদার): ভুট্টা ভাঙা, গম ভাঙা, খৈল, ভুসি।

  • ছাগলের খাদ্য সময়সূচীঃ

  1. সকাল: সবুজ ঘাস + দানাদার খাবার।
  2. দুপুর: খড় বা ডালপালা।
  3. সন্ধ্যা: দানাদার খাবার + সবুজ ঘাস।
  4. পানি: পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পানি সব সময় উপলব্ধ রাখুন।
  5. খনিজ ও লবণ: খনিজ মিশ্রণ বা লবণের বাটি রাখুন।

  • ছাগলের স্বাস্থ্য পরিচর্যাঃ

  1. টিকাদান: ক্ষুরা রোগ, পিপিআর (ঢেঁকিলা রোগ), ব্রুসেলোসিস, তড়কা ইত্যাদির টিকা সময়মতো দিন।
  2. কৃমিনাশক: ৩-৪ মাস পরপর কৃমিমুক্ত করুন।
  3. পরজীবী নিয়ন্ত্রণ: তেল, ছাই বা ঔষধ দিয়ে উকুন, আঁচিল নিয়ন্ত্রণ।

  • রোগ চেনা ও ব্যবস্থাপনাঃ

  1. ডায়রিয়া: ঈষদুষ্ণ পানিতে অরিকট বা নুন-চিনির জল দিন।
  2. নিউমোনিয়া: দ্রুত ভেটেরিনারির পরামর্শ নিন।
  3. নিয়মিত শরীর পরীক্ষা: চোখ, নাক, কান, পা ও মল-মূত্র পর্যবেক্ষণ করুন।

  • বাচ্চার ব্যবস্থাপনাঃ

  1. প্রজনন বয়স: ছাগী ৮-১০ মাস, পাঁঠা ১২ মাস। ( মিলন প্রদ্ধতি )
  2. গর্ভাবস্থায় যত্ন: আলাদা স্থান, পুষ্টিকর খাবার (অতিরিক্ত দানাদার), টিকা।
  3. বাচ্চা প্রসব: পরিচ্ছন্ন স্থান, নরম বিছানা, বাচ্চার নাভিতে টিংচার আয়োডিন দিতে হবে।
  4. বাচ্চার যত্ন: প্রথম ৩ দিন মায়ের শাল দুধ অবশ্যই খাওয়ান, ১ মাস পর থেকে কৃমিনাশক।

  • ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতাঃ

  1. খামার পরিষ্কার: প্রতিদিন মল-মূত্র পরিষ্কার করুন, সপ্তাহে একবার জীবাণুনাশক স্প্রে করুন।
  2. বেডিং: খড় বা শুকনা বালি ব্যবহার করুন।
  3. বায়ুচলাচল: শেডে যাতে বাতাস ও আলো প্রবেশ করতে পারে।ক
  4. জন্ম তারিখ, টিকা, প্রজনন, রোগের ইতিহাস, খরচ-আয় ইত্যাদি লিখে রাখুন।
  5. এটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।

ছাগলের রোগ দ্রুত ছড়ায়, তাই নতুন ছাগল কেনার পর কমপক্ষে ১৫ দিন আলাদা রাখুন (কোয়ারেন্টাইন)। নিয়মিত টিকা ও পরিচ্ছন্নতাই রোগমুক্ত খামারের চাবিকাঠি।

ছাগলের খড় খাওয়ানোর সঠিক নিয়মঃ

খড় ছাগলের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁশযুক্ত খাদ্য, যা হজমতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং খাদ্য খরচ কমায়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে না খাওয়ালে পুষ্টিহীনতা বা হজমের সমস্যা হতে পারে। খড় খাওয়ানোর সময় দেখে নিবেন যেন খড় সবুজ-হলদেটে রং (ফসফরাস ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ) ধুলামুক্ত, ছত্রাকমুক্ত ও পচনহীন নরম ও ঝাঁজরামুক্ত হয়ে থাকে। আর ডালের খড় (যেমন: খেসারি, মাসকালাই), ধানের খড়, গমের খড় ইত্যাদি। ডালের খড় প্রোটিন বেশি থাকে।

খড় শুধুই আঁশের উৎস, প্রোটিন ও শক্তির জন্য দানাদার বা সবুজ ঘাস দিতে হবে। মোট খাদ্যের ৩০-৪০% খড় হতে হবে। খড় কখনও সম্পূর্ণ খাদ্য নয়, এটি শুধু আঁশের যোগান দেয় তা এমন কথা নয় এর সাথে আপনাকে অন্য কিছু মিশিয়ে খাবার দিতে হবে ছাগলকে। খড় দেওয়ার সময় ধূসর/সাদা, মোল্ডযুক্ত বা পোকাযুক্ত খড় দেবেন না। যাতে ছাগলের কোনো ক্ষতি হয়। এই সব কথা মাথায় রেখে ছাগলকে খাবার দিবেন।

একটি ছাগল দিনে কত কেজি ঘাস খায়ঃ

একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছাগল সাধারণত দৈনিক নিজের দেহের ওজনের ৩-৫% হারে সবুজ ঘাস খায়। অর্থাৎ, গড়ে একটি ২০-৩০ কেজি ওজনের ছাগল দিনে ১-১.৫ কেজি শুকনা ঘাস বা ৪-৬ কেজি টাটকা সবুজ ঘাস গ্রহণ করতে পারে। তবে এই পরিমাণ ছাগলের প্রজাতি, বয়স, স্বাস্থ্য, উৎপাদন অবস্থা (দুধাল/গর্ভবতী) এবং ঘাসের গুণমানের উপর নির্ভর করে।

যেমন বাচ্চা ছাগল (৩-৬ মাস) দৈনিক ০.৫-১ কেজি টাটকা ঘাস খায়। ছাগলকে শুধু ঘাস খাওয়ালে চলবে না এর সাথে আপনাকে  শুকনা অবস্থায় পরিমাণ প্রায় ১/৩ অংশ কমে যায় (যেমন: ৫ কেজি টাটকা ঘাস ≈ ১.৫-২ কেজি শুকনা খড় দিতে হবে।

ছাগলের খাবারের তালিকাঃ

ছাগলের সম্পূর্ণ খাদ্য তালিকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে। ছাগলের সুস্থতা ও উৎপাদনের জন্য একটি সুষম খাদ্য তালিকা অপরিহার্য। নিচে বিভিন্ন বয়স ও অবস্থাভেদে খাবারের পরিমাণসহ তালিকা দেওয়া হলোঃ

                                                  সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক ছাগল (৩০ কেজি ওজন) 

খাদ্যের ধরন                                  পরিমাণ (প্রতিদিন)                                              টীকা

সবুজ ঘাস                                    ৪-৬ কেজি                                       নেপিয়ার, প্যারা, দেশি ঘাস

খড়/শুকনো ঘাস                           ১-১.৫ কেজি                                       ভেজানো অবস্থায় (ঐচ্ছিক)

দানাদার খাবার                           ২০০-৩০০ গ্রাম                           ভুট্টা ভাঙা, গম ভাঙা, খৈল, ভুসি

লবণ ও খনিজ                                   ১০-১৫ গ্রাম                                     বাজারে পাওয়া "খনিজ মিশ্রণ"

পানি                                           ৩-৫ লিটার                                     পরিষ্কার ও তাজা


                                   দুধাল ছাগলের অতিরিক্ত খাবার (দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য)


খাদ্য                                                                  পরিমাণ (দুধের প্রতি লিটার হিসাবে)

দানাদার খাবার                                                  অতিরিক্ত ২০০-৩০০ গ্রাম

সবুজ ঘাস                                                            অতিরিক্ত ১-২ কেজি

খনিজ মিশ্রণ                                                            ৫ গ্রাম বাড়তি

আপনি যদি এই খাবার গুলো নিয়মিত খাওয়াতে পারেন। তাহলে আপনার ছাগল সঠিক পরিমাণে ও সুস্থ্য সহকারে বেড় ওঠবে।

ছাগল পালনের আয় ব্যয় হিসাবঃ

নিচে একটি ১০টি ছাগীর ছোট খামারের আনুমানিক ১ বছরের আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ দেওয়া হলো। স্থান, জাত ও বাজারের দাম অনুযায়ী এই হিসাব পরিবর্তিত হতে পারে। নিম্নে দেখুন?


                                     প্রাথমিক বিনিয়োগ (এককালীন খরচ)


খরচের খাত                        আনুমানিক টাকা (₹)   আনুমানিক টাকা                মন্তব্য

শেড নির্মাণ (বাঁশ, টিন, শ্রম) ১৫,০০০ - ২০,০০০           ২০,০০০ - ২৫,০০০১০ ছাগী +২পাঁঠা+বাচ্চার 

পানির ব্যবস্থা (পাত্র, সংযোগ) ১,০০০ - ২,০০০            ১,৫০০ - ২,৫০০

প্রাথমিক ওষুধ, টিকা, কিট ২,০০০ - ৩,০০০            ২,৫০০ - ৪,০০০

মোট প্রাথমিক বিনিয়োগ ১৮,০০০ - ২৫,০০০     ২৪,০০০ - ৩২,০০০


                                      ছাগল ক্রয় খরচ (১০ ছাগী + ১ পাঁঠা)


প্রাণী                          একক মূল্য              ইউনিট মূল্য                              মোট টাকা                 

ছাগী (১০টি)    ৫,০০০ - ৮,০০০/টি            ৬,০০০ - ১০,০০০/টি             ৬০,০০০ - ১,০০,০০০

পাঁঠা (১টি)    ৬,০০০ - ১০,০০০             ৮,০০০ - ১২,০০০         ৮,০০০ - ১২,০০০

মোট ক্রয় মূল্য   ৫৬,০০০ - ৯০,০০০             ৬৮,০০০ - ১,১২,০০০


                                   মাসিক চলমান খরচ (১০ ছাগী + ১ পাঁঠা + বাচ্চা)


খরচের খাত                মাসিক আনুমানিক          মাসিক আনুমানিক                   হিসাবের ভিত্তি খাদ্য খরচ

সবুজ ঘাস (চরানো/কিনা)      ৫০০ - ১,০০০          ৮০০ - ১,৫০০                          নিজে উৎপাদন করলে

দানাদার খাবার                ২,০০০ - ৩,০০০      ৩,০০০ - ৪,০০০                 ৩০০ গ্রাম/প্রাণী/দিন

খনিজ/লবণ/ভিটামিন       ২০০ - ৩০০        ৩০০ - ৫০০

স্বাস্থ্য পরিচর্যা                       ৩০০ - ৫০০         ৫০০ - ৮০০            টিকা, কৃমিনাশক, সাধারণ ওষুধ

বিদ্যুৎ/পানি/অন্যান্য       ২০০ - ৪০০         ৩০০ - ৬০০

মাসিক মোট খরচ               ৩,২০০ - ৫,২০০ ৪,৯০০ - ৭,৪০০

ছাগল পালন একটি লাভজনক ব্যবসা যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, নিয়মিত যত্ন ও ভালো বিপণন নিশ্চিত করা যায়। শুরুতে ছোট করে শুরু করুন, অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করুন, তারপর ধীরে ধীরে খামার সম্প্রসারণ করুন। আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে এই হিসাব কার্যকর।

কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশিঃ

লাভের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার এলাকার জলবায়ু, বাজার চাহিদা, খাদ্য উপাদান ও ব্যবস্থাপনার উপর। তবে সাধারণভাবে নিম্নলিখিত জাতগুলো উচ্চ লাভজনক হিসেবে বিবেচিত.....।।

  • ব্ল্যাক বেঙ্গল (কৃষ্ণ বঙ্গীয়) – মাংসের জন্য

  1. দ্রুত বংশবৃদ্ধি (বছরে ২ বার, ২-৩ বাচ্চা)।
  2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, টিকে থাকার হার ভালো।
  3. কম খাদ্য চাহিদা, স্থানীয় ঘাস-পাতায খাওয়ালে চলে।
  4. বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি (বিশেষ করে ঈদ, পূজা, উৎসবের মৌসুমে)।
  5. উপযোগী এলাকা: বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উড়িষ্যা ও অন্যান্য উষ্ণ আর্দ্র অঞ্চল।

  • জামুনাপারি – দুধ ও মাংসের সংকরঃ

  1. দুধ উৎপাদন: দিনে ২-৪ লিটার পর্যন্ত (বিটাল বা সানেনের চেয়ে কম কিন্তু স্থানীয় জাতের চেয়ে বেশি)।
  2. মাংস উৎপাদন: শরীর ভারী, মাংসের পরিমাণ ভালো।
  3. সহনশীলতা: ভারতীয় উপমহাদেশের জলবায়ু উপযোগী।
  4. সেরা ব্যবহার: "দুধ বিক্রি + বাচ্চা বিক্রি" কম্বো মডেলে লাভ দ্বিগুণ হয়।

  • সানেন / আলপাইন – দুধের জন্য শীর্ষ (যদি আধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকে)

  1. দুধ উৎপাদন: দিনে ৩-৬ লিটার পর্যন্ত।
  2. দুধের দাম: স্থানীয় জাতের চেয়ে ২০-৩০% বেশি।
  3. উন্নত ব্যবস্থাপনা, সুষম খাদ্য ও প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি লাগে।
  4. শীতল বা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু পছন্দ করে।
  5. উপযোগী: নেপালের পার্বত্য অঞ্চল, ভারতের হিমাচল, উত্তরাখণ্ড বা নিয়ন্ত্রিত শেড।

  • বিটাল – দ্বৈত উদ্দেশ্য (দুধ + মাংস)

  1. দুধ: দিনে ১.৫-২.৫ লিটার।
  2. মাংস: দেহভর ভালো, বাচ্চা দ্রুত বাড়ে।
  3. জনপ্রিয়তা: বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক চাহিদা, সংকরায়ণের জন্য ব্যবহার হয়।
  4. সুবিধা: স্থানীয় পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা ভালো।

  • বোয়ার – মাংসের জন্য বিশেষায়িত (উচ্চ বিনিয়োগ, উচ্চ লাভ)

  1. দ্রুত ওজন বৃদ্ধি: দিনে ২০০-৩০০ গ্রাম পর্যন্ত।
  2. মাংসের মান: চর্বি কম, মাংস বেশি, বাজারে প্রিমিয়াম দাম।
  3. উচ্চ বিনিয়োগ (দামি চারা, পুষ্টিকর খাদ্য)।
  4. উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
  5. বাজার: শহুরে হোটেল, রেস্তোঁরা, সুপারশপ।

  • কোন জাতের ছাগল choose করবেন?

  1. কম খরচে শুরু করতে চান, কম বিনিয়োগ ব্ল্যাক বেঙ্গল কম ঝুঁকি, দ্রুত রিটার্ন, স্থানীয় চাহিদা
  2. দুধ ও মাংস – ভারসাম্য চান জামুনাপারি বা বিটাল দুটো আয়ের উৎস, স্থানীয়ভাবে উপযোগী
  3. শুধু বাণিজ্যিক দুধ চান সানেন (যদি উন্নত ব্যবস্থা থাকে) উচ্চ উৎপাদন, দুধের দাম ভালো
  4. বড় বিনিয়োগ, আধুনিক খামার বোয়ার প্রিমিয়াম বাজার, দ্রুত বৃদ্ধি
  5. সংকরায়ণ করতে চান বিটাল × ব্ল্যাক বেঙ্গল রোগ প্রতিরোধ + বেশি উৎপাদন

  • চূড়ান্ত পরামর্শ নেওয়াঃ

  1. স্থানীয় বাজারে মাংসের চাহিদা বেশি হলে ব্ল্যাক বেঙ্গল,
  2. দুধের চাহিদা বেশি ও সামর্থ্য থাকলে জামুনাপারি বা সংকর জাত দিয়ে শুরু করুন।
  3. লাভের সর্বোচ্চ সূত্র হলো: সঠিক জাত + সুষম খাদ্য + রোগ নিয়ন্ত্রণ + সময়মতো বিপণন।

আপনি এই গুলো ছাগল পোষলে আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন।

ছাগলের প্রিয় খাবার কিঃ

ছাগলের প্রিয় খাবার হলো বিভিন্ন ধরনের সবুজ ঘাস, পাতা ও নরম ডালপালা। বিশেষভাবে তারা নেপিয়ার ঘাস, প্যারা ঘাস, মিষ্টি কচি ঘাস, গাজর পাতা, কাঁঠালের পাতা, কলা পাতা, লতির পাতা এবং গাছের কচি ডগা পছন্দ করে। এছাড়া ফসলের অবশিষ্টাংশ যেমন ভুট্টার পাতা, মিষ্টি আলুর পাতা, কুমড়ো পাতা এবং ফলের খোসা (কলার খোসা, তরমুজের খোসা) তাদের খুব প্রিয়।

দানাদার খাবারের মধ্যে ভুট্টা ভাঙা, গম ভাঙা এবং চিটাগুড় মিশ্রিত খাবার তাদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। তবে মনে রাখবেন, ছাগলের খাদ্যতালিকায় বিষাক্ত উদ্ভিদ (যেমন: ধুতরা, কিছু বুনো গুল্ম) থাকলে বিপদ হতে পারে। সর্বোপরি, পরিচিত ও তাজা সবুজ খাবার সরবরাহ করাই শ্রেয় ছগলের জন্য।

লেখকের মন্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন পশু পালনের ক্ষেত্রে ছাগলের খামার করার নিয়ম গুলো কি কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে ছাগল পালন প্রদ্ধতি কেমন করে করে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url