চিনা হাঁসের খাদ্য তালিকা - চিনা হাঁসের বাচ্চা পালন প্রদ্ধতি? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে হাঁস পালনের ক্ষেত্রে চিনা হাঁসের খাদ্য তালিকা কি কি হয়ে থাকে ও কি খাওয়া উচিত। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে চিনা হাঁসের বাচ্চা পালন প্রদ্ধতি কেমন ও কিভাবে হাঁসের বাচ্চাকে লালন পালন করতে হয়। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আজকের দিনে সবাই কমবেশি ব্যবসার দিনে ছুটে চলেছে। কেননা ব্যবসা ভালভাবে করলে ও বুঝে শুনে করলে একটা ভাল লাভ পাওয়া যায়। তেমনটা আপনি করতে পারেন চিনা হাঁসের ব্যবসা করে। এই চিনা হাঁসের ব্যবসা করলে আপনি হাঁস ও ডিম বিক্রি করে দুটো দিক দিয়ে ইনকাম করতে পারবেন।

তাই আসুন জেনে রাখি যে, হাস পালন কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে চিনা হাঁসের খাদ্য তালিকা কি ও কেমন করী তাদেরকে খাবার দিতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে চিনা হাঁসের বাচ্চা পালন প্রদ্ধতি কেমন করে করতে হয়। নিম্নে বিস্তারিত......?

চিনা হাঁসের খাদ্য তালিকাঃ

চিনা হাঁস খাকি ক্যাম্পবেল টাইপ বা লেয়ার হাঁস হয়ে থাকে যা দ্রুত বড় হয় এবং বেশি ডিম দেয়। তাই এদের জন্য ব্যালান্সড ও পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ানো খুবই জরুরি। চিনা হাঁসের খাদ্য তালিকায় প্রধানত ভাঙা ভুট্টা, চালের কুঁড়া, গম, সরিষার খৈল, শামুক, শুঁটকি, কলমি, হেলেঞ্চা, সয়াবিন মিল ও মাছের গুঁড়া রাখতে হয়, যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও শক্তি পাওয়া যায়। ডিমের খোসা শক্ত করতে ঝিনুকের গুঁড়া বা চুন খাওয়ানো খুবই গুরত্বপূর্ণ তাদের ক্যালসিয়ামের জন্য।

এছাড়া নিয়মিত সবুজ শাক, ঘাস, লতাপাতা ও শাকসবজি দিলে হাঁস সুস্থ থাকে ও ডিম উৎপাদন বাড়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত পানি, কারণ পানি ছাড়া হাঁস ঠিকমতো খাবার ও থাকতে পারে না। এইভাবে সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চললে চিনা হাঁস থেকে ভালো ডিম ও লাভ দুটোই পাওয়া যায়।

চিনা হাঁসের বাচ্চা পালন প্রদ্ধতিঃ

চিনা হাঁসের বাচ্চা পালন করতে হলে শুরুতেই উষ্ণতা, পরিষ্কার পরিবেশ, সঠিক যত্ন, আর সঠিক খাবার এই চারটা জিনিস ঠিক রাখা সবচেয়ে জরুরি। বাচ্চা খামারে কিংবা বাড়িতে আনার পর প্রথম ৭–১০ দিন ব্রুডিং করতে হবে। অর্থাৎ ৩০–৩৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুযায়ী তাদেরকে গরমে রাখতে হবে, যেন ঠান্ডা না লাগে। 

মেঝেতে শুকনো খড় বা চট বিছিয়ে রাখতে হবে এবং জায়গা সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। খাবার হিসেবে শুরুতে উন্নত মানের স্টার্টার ফিড বা মুড়ি-চিড়া ভিজিয়ে দিতে হবে। আর ৩–৪ দিন পর থেকে অল্প অল্প করে ভাঙা ভুট্টা, চালের গুঁড়া খেতে দিতে হবে। পরিষ্কার পানি সবসময় সামনে রাখতে হবে, তবে পানির পাত্রে যেন বাচ্চা পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

নিয়মিত জায়গা পরিষ্কার, ভিটামিন দেওয়া আর ভিজে পরিবেশ এড়িয়ে চললে চিনা হাঁসের বাচ্চা দ্রুত বড় হয়, রোগ কম হয় আর ভবিষ্যতে ভালো ডিমও দেয়। 

চিনা হাঁস কত দিনে ডিম পারেঃ

চিনা হাঁস সাধারণত ১২০ থেকে ১৪০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ মাস বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। যদি ভালো খাবার, পরিষ্কার পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলো আর ঠিকমতো যত্ন পাওয়া পায়। তাহলে কিছু ক্ষেত্রে ১১০ দিনেও ডিম দেখা যেতে পারে। এই চিনা হাঁস বছরে প্রায় ৭০ থেকে ১২০টি করে ডিম দিতে সক্ষম।

তবে পরিচর্যায় ঘাটতি থাকলে ডিম পাড়া শুরু হতে ৫ মাস পর্যন্তও লেগে যায়। তাই নিয়ম মেনে পালন করলে চিনা হাঁস খুব দ্রুত ডিম দেওয়া শুরু করে এবং নিয়মিত ভালো উৎপাদন ভাল হয় ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক।

চিনা হাঁসের রোগ ও চিকিৎসাঃ

চিনা হাঁস (খাকি ক্যাম্পবেল টাইপ) তুলনামূলকভাবে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলেও ঠিকভাবে যত্ন না নিলে নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমনঃ ডাক কলেরা, কলিবেসিলোসিস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি। নিচে চিনা হাঁসের সাধারণ রোগ ও তাদের চিকিৎসা সহজভাবে দেওয়া হলোঃ

  • সর্দি–কাশি ও শ্বাসকষ্টঃ

  1. লক্ষণঃ হাঁচি, নাক দিয়ে পানি, শ্বাস নিতে কষ্ট
  2. চিকিৎসাঃ টাইলোসিন, ডক্সিসাইক্লিন, ভিটামিন সি ব্যবহার করতে পারেন।

  • ডায়রিয়া (পাতলা পায়খানা)

  1. লক্ষণঃ পানির মতো পায়খানা, দুর্বলতা, খাবার না খাওয়া।
  2. চিকিৎসাঃ মেট্রোনিডাজল, ওরস্যালাইন, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স

  • কৃমি রোগঃ

  1. লক্ষণঃ ওজন কমে যাওয়া, পালক রুক্ষ, ডিম কম দেওয়া
  2. চিকিৎসাঃ অ্যালবেনডাজল, লেভামিসল

  • হাঁসের প্লেগঃ

  1. লক্ষণঃ হঠাৎ মৃত্যু, সবুজ রঙের পায়খানা
  2. চিকিৎসাঃ নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এটা কপাল ধরা যায়

এই নিয়ম কানুন আপনি মেনে চললে আপনার পোষা চিনা হাঁস অবশ্যই ভালোভাবে লালন পালন হবে ও সুস্থ্য সবল থাকবে ইন্সআল্লাহ্‌।

চিনা হাঁসের ভ্যাকসিনঃ

চিনা হাঁসকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে ভ্যাকসিন দেওয়া খুবই জরুরি, কারণ কিছু মারাত্মক রোগে একবার আক্রান্ত হলে পুরো খামার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নিচে চিনা হাঁসের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন তালিকা ও সময়সূচি সহজভাবে দেওয়া হলোঃ

  • হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিনঃ

  1. বয়স: ১৫–২০ দিন
  2. আবার দিতে হবে: ৬ মাস পরপর
  3.  কাজ: হঠাৎ মৃত্যু ও মারাত্মক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে

  • হাঁসের কলেরা ভ্যাকসিনঃ

  1. বয়স: ৩০–৩৫ দিন
  2.  আবার দিতে হবে: ৬ মাস পরপর
  3.  কাজ: পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়

  • হাঁসের পক্স ভ্যাকসিন (যদি এলাকায় রোগের প্রভাব থাকে)

  1. বয়স: ৬–৮ সপ্তাহ
  2.  সাধারণত একবারই যথেষ্ট
  3.  কাজ: ঠোঁট, চোখ ও মাথায় গুটি হওয়া থেকে রক্ষা করে

  • গুরুত্বপূর্ণ নিয়মঃ

  1. ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে হাঁস সম্পূর্ণ সুস্থ থাকতে হবে
  2. ভ্যাকসিনের আগে ও পরে ভিটামিন C বা মাল্টিভিটামিন দিলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়
  3. একই দিনে একাধিক ভ্যাকসিন না দেওয়াই ভালো
  4. ভ্যাকসিন সবসময় ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে

এই ভ্যাকসিন আপনি ঠিক মত ও নিয়মিত হাঁসের উপরে প্রয়োগ করলে আপনার হাঁস সুরক্ষিত ও সুস্থ্যবান থাকবে।

চিনা হাঁস চেনার উপায়ঃ

চিনা হাঁস চেনার উপায় বেশ সহজ, কারণ এদের গঠন ও স্বভাবে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। চিনা হাঁসের শরীর সাধারণত লম্বাটে ও চিকন, ঘাড় তুলনামূলকভাবে লম্বা এবং দাঁড়িয়ে থাকা ভঙ্গিটা প্রায় পেঙ্গুইনের মতো সোজা হয়। এদের রঙ বেশিরভাগ সময় হালকা বাদামি, ধূসর বা খাকি ধরনের, আর চোখ সাধারণত উজ্জ্বল ও সজাগ দেখায়। চিনা হাঁস খুব সুন্দর ও চঞ্চল প্রকৃতির, হাঁটাচলা বেশি করে এবং দ্রুত চলাফেরা করে।

আর এই হাঁস উড়ে যেকোনো গাছের ডালে বসতে পারে। সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো এই হাঁসগুলো খুব বেশি ডিম দেয়, তাই খামারে যারা লেয়ার হাঁস পালন করে, তারা সাধারণত চিনা হাঁসই বেছে নেয়। এসব লক্ষণ মিললেই সহজে চিনা হাঁস চিনে নেওয়া যায়। ও এই হাঁস খেতে খুবই সুস্বাদু প্রকারের হয়ে থাকে, যা সবার মুখে লেগে যায়।

চিনা হাঁস কত মাস বয়সে ডিম দেয়ঃ

চিনা হাঁস সাধারণত ৪ থেকে সাড়ে ৪ মাস বয়সেই ডিম পাড়া শুরু করে। ভালো খাবার, পরিষ্কার পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলো ও ঠিকমতো যত্ন পেলে অনেক সময় ৪ মাসের আগেই প্রথম ডিম দেখা যায়। তবে যদি খাবারে পুষ্টির ঘাটতি থাকে বা পরিবেশ অনুকূল না হয়, তাহলে ডিম পাড়া শুরু হতে ৫ মাসও লেগে যেতে পারে।

তাই নিয়ম মেনে পালন করলে চিনা হাঁস খুব দ্রুত ডিম দেওয়া শুরু করে এবং নিয়মিত ভালো উৎপাদন হয়। এই হাঁস উভয় ডিম ও খাওয়ার জন্য খুবই ভাল প্রজাতির মান মানিয়ে চলে। 

চিনা হাঁসের বাচ্চাকে কি খাবার দেওয়া হয়ঃ

চিনা হাঁসের বাচ্চাকে বয়স অনুযায়ী পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার দিতে হয়। জন্মের প্রথম ৭–১০ দিন উন্নত মানের ডাক স্টার্টার ফিড ও ক্রাম্বস দেওয়া সবচেয়ে ভালো, এতে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে। যদি প্রস্তুত ফিড না পাওয়া যায়, তাহলে ভাঙা চাল, গুঁড়া ভুট্টা ও সামান্য সেদ্ধ ডিমের কুসুম মিশিয়েও দেওয়া যায়।

১০–১৫ দিনের পর থেকে ধীরে ধীরে ভাঙা গম, চালের কুঁড়া ও সবুজ নরম শাক অল্প অল্প করে দেওয়া যায়। সবসময় পরিষ্কার পানি সামনে রাখতে হবে, তবে পানির পাত্র এমন হতে হবে যেন বাচ্চা পড়ে না যায়। সঠিক খাবার ও পানি পেলে চিনা হাঁসের বাচ্চা দ্রুত বড় হয় ও রোগ কম হয়।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন হাঁস পালনের ক্ষেত্রে চিনা হাঁসের খাদ্য তালিকা কি কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে চিনা হাঁসের বাচ্চা পালন প্রদ্ধতি কেমন হয়।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............ www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url