স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি - স্বাস্থ্য সহকারী পদের পরিক্ষার প্রশ্ন? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে চাকরীর করার ক্ষেত্রে একটা ডিপারমেন্টে স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি ও কি কি দায়িত্ব থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে স্বাস্থ্য সহকারী পদের পরিক্ষার প্রশ্ন ও তার উত্তর কিভাবে পাওয়া যায়। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আজকের দিনে কমবেশি সব মানুষই একটা চাকরী খোঁজে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। কেননা চাকরী না থাকলে কোনো কিংবা আপনার কোনো ইনকাম না থাকলে আপনাকে কেউ মূল্য দিবে না বর্তমানে ছেলে মানুষকে। এটাই বাস্তবতা জীবনের কাহিনী।
তাই আসুন জেনে রাখি যে, চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা কোনো ডিপারমেন্টে কাজের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি ও কি কি তার দায়িত্ব থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে স্বাস্থ্য সহকারী পদের পরিক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর কিভাবে সহজে পাওয়া যাবে। নিম্নে বিস্তারিত.........?
স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কিঃ
স্বাস্থ্য সহকারী মূলত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে মাঠ পর্যায়ে জনগণের জন্য টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করা, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, তারা কিভাবে সুস্থ্যবান থাকতে পারবে, সেবিষয়ে সচেতন করা। পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া, সাধারণ রোগ সম্পর্কে সচেতন করা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া।
এছাড়া গ্রাম বা এলাকার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা, ডাক্তার ও নার্সদের সহযোগিতা করা। রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো ও প্রয়োজন হলে রোগীকে উচ্চতর চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানোও তাদের মূল দায়িত্বের অংশ। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াই একজন স্বাস্থ্য সহকারীর মূল কাজ।
স্বাস্থ্য সহকারী পদের পরিক্ষার প্রশ্নঃ
স্বাস্থ্য সহকারী পদের জন্য আপনার বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। তাই নিচে কিছু জ্ঞানমূল্যক সিমপ্লে প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো দেখে নিন কাজে আসতে পারে।
১. WHO-এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তরঃ World Health Organization (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)
২. WHO-এর সদর দপ্তর কোথায়?
উত্তরঃ জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
৩. বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির নাম কী?
উত্তরঃ ইপিআই (EPI – Expanded Programme on Immunization)
৪. ভিটামিন ‘C’-এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তরঃ স্কার্ভি
৫. ভিটামিন ‘D’-এর অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তরঃ রিকেটস
৬. নবজাতকের প্রথম টিকা কোনটি?
উত্তরঃ বিসিজি (BCG)
৭. গর্ভবতী মাকে আয়রন ট্যাবলেট কেন দেওয়া হয়?
উত্তরঃ রক্তশূন্যতা প্রতিরোধের জন্য
৮. পরিবার পরিকল্পনার স্থায়ী পদ্ধতি দুটি কী?
উত্তরঃ পুরুষ, ভ্যাসেকটমি ও নারী, টিউবেকটমি
৯. গর্ভাবস্থার সুস্থ সময়কাল কত মাস?
উত্তরঃ ৯ মাস ১০ দিন
১০. মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো উচিত কত মাস পর্যন্ত?
উত্তরঃ ৬ মাস (শুধু বুকের দুধ)
১১. স্বাভাবিক দেহ তাপমাত্রা কত?
উত্তরঃ ৯৮.৪°F বা ৩৭°C
১২. ডায়রিয়া হলে প্রথম করণীয় কী?
উত্তরঃ ওরস্যালাইন খাওয়ানো
১৩. স্বাভাবিক রক্তচাপ কত?
উত্তরঃ ১২০/৮০ mmHg
১৪. সাপ কামড়ালে প্রথম করণীয় কী?
উত্তরঃ আক্রান্ত স্থান শক্ত করে না বাঁধা, দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া
১৫. রক্তশূন্যতার প্রধান লক্ষণ কী?
উত্তরঃ শরীর দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ফ্যাকাশে ভাব
১৬. ডেঙ্গু কোন মাধ্যমে ছড়ায়?
উত্তরঃ এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমে
১৭. যক্ষ্মার জীবাণুর নাম কী?
উত্তরঃ Mycobacterium tuberculosis
১৮. ম্যালেরিয়া কোন মাধ্যমে ছড়ায়?
উত্তরঃ অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে
১৯. কলেরা রোগের প্রধান লক্ষণ কী?
উত্তরঃ অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা
২০. কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়ায়?
উত্তরঃ হাঁচি, কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে
২১. স্বাস্থ্য সহকারীর প্রধান কাজ কী?
উত্তরঃ টিকাদান, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া মানুষকে।
২২. ইপিআই কর্মসূচির উদ্দেশ্য কী?
উত্তরঃ শিশু ও মায়েদের প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে রক্ষা করা।
২৩. অপুষ্টি কী?
উত্তরঃ শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবকেই অপুষ্টি বলে।
২৪. পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষা, পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতি।
২৫. বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন কেন?
উত্তরঃ ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য।
এই গুলো প্রশ্ন, উত্তর এক নজর দেখে গেলে পরিক্ষার হলে কিছু হলেও হেল্প পাবে।
স্বাস্থ্য সহকারীর বেতন কতঃ
বাংলাদেশে সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারীর বেতন জাতীয় ২০১৫ অনুযায়ী বেতন স্কেল নির্ধারিত করা হয়েছে। যা সাধারণত ১৩তম বা ১৬তম গ্রেডের মধ্যে পড়ে (নিয়োগের ধরন ও প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)। বর্তমানে একজন স্বাস্থ্য সহকারীর মাসিক মূল প্রায় ৯,৩০০ থেকে ২২,৪৯০ টাকার মধ্যে, আর এর সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা যোগ হয়ে ২২,৪৯০ টাকা ঠেকে যায়। অভিজ্ঞতা বাড়লে, পদোন্নতি হলে এবং ইনক্রিমেন্ট যোগ হলে বেতন আরও বৃদ্ধি পাবে।
স্বাস্থ্য সহকারীর কত তম গেডঃ
স্বাস্থ্য সহকারীর চাকরী খুব শান্তির ও মান-সন্মানের একটা চাকরী। এটি মানুষকে সেবা করা বোঝায়। যা মানুষকে সুস্থ্য ও সবল রাখতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সহকারীর পদটি সাধারণত ১৬তম গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত। আগে এটি ১৬তম গ্রেডেই নিয়োগ হতো এবং এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই গ্রেডই কার্যকর আছে। তবে বিভিন্ন সময় আপগ্রেডের দাবির কারণে কিছু জায়গায় ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করার আলোচনা ও প্রস্তাবও দেখা যায়।
স্বাস্থ্য সহকারীর পদের পদোন্নতিঃ
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সহকারীর পদের পদোন্নতি ধাপে ধাপে অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা কাজের মাধ্যমে সিনিয়ার ও জুনিয়ার হয়ে থাকে। সাধারণত একজন স্বাস্থ্য সহকারী কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর সিনিয়র স্বাস্থ্য সহকারী পদে উন্নীত হতে পারেন। এরপর সুযোগ থাকলে তিনি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (AHI) পদে পদোন্নতি পান। সেখান থেকে আবার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরিদর্শক (HI) পদেও উন্নীত হওয়ার সুযোগযুনিয়া
তবে পদোন্নতির গতি অনেকটাই নির্ভর করে সরকারি নীতিমালা, শূন্য পদের সংখ্যা ও বিভাগীয় পরীক্ষার ওপর। নিয়মিত কাজের ভালো রিপোর্ট, প্রশিক্ষণ ও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সহকারীর ক্যারিয়ারে উন্নতির সুযোগ ধাপে ধাপে তৈরি হয়।
স্বাস্থ্য সহকারী পদের সুযোগ সুবিধাঃ
স্বাস্থ্য সহকারী পদের সুযোগ–সুবিধা সত্যিই ভালো, এজন্যই এই চাকরিটা অনেকের কাছে ড্রিম জব টাইপ হয়ে থাকে। এই স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরী করলে সত্যি নিজের কাছে অনেক ভাল লাগে। এটি একটি মান-সন্মান ও মুখে হাসি ফুটানোর চাকরী। আবার আপনার আপদ-বিপদে আপনি চাইলে দরখাস্ত লিখে ছুটি নিতে পারবেন খুব সহজে।
একজন স্বাস্থ্য সহকারী সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তিনি নিয়মিত মাসিক বেতন, বছরে ইনক্রিমেন্ট, বাড়িভাড়া, ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ পান। চাকরি শেষে রয়েছে পেনশন ও গ্র্যাচুইটির সুবিধা, যা ভবিষ্যতের জন্য বড় সাপোর্ট। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে সরকারি প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ, বদলির মাধ্যমে নিজ এলাকায় কাজ করার সুযোগ এবং ধাপে ধাপে পদোন্নতির সুযোগও থাকে।
সব মিলিয়ে স্থায়ী চাকরি, সামাজিক সম্মান আর নিরাপদ ভবিষ্যতের কারণে স্বাস্থ্য সহকারীর পদটি খুবই আকর্ষণীয় একটি চাকরী।
স্বাস্থ্য সহকারী পরিক্ষার পাসমার্ক কতঃ
স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার পাস মার্ক সাধারণত প্রত্যেক বারে এক থাকে না। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুযায়ী পরিক্ষায় ৪০% থেকে ৫০% হলেই পাস হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তবে এটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় মোট নম্বরের কমপক্ষে ৪০% পেলেই মৌলিকভাবে পাশ ধরা হয়, কিন্তু শুধু পাশ করলেই চাকরি নিশ্চিত হয় না।কারণ মেধা তালিকা অনুযায়ী বেশি নম্বর পাওয়াদেরই ভাইভা ও চূড়ান্ত নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়।
তাই সেফ থাকতে চাইলে লক্ষ্য রাখা উচিত ৬০% বা তার বেশি নম্বর তোলার। চাকরীর ক্ষেত্রে আপনার যে পরিক্ষা হবে। সেটি ১০০ নম্বর থাকবে, তার মধ্য জ্ঞানমূলক প্রশ্ন, গণিত, ইংরেজি, বাংলা প্রশ্ন সংযুক্ত করে মোট ৮০ নম্বর থাকে। আর আপনি পরিক্ষায় টিকে গেলে ভাইভা পরিক্ষা থাকে যথাক্রমে ২০ নম্বর।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন চাকরী নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সহকারীর কাজ কি ও কি কি পালন করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে স্বাস্থ্য সহকারী পদের পরিক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর কেমন।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url