মুরগীর খামার করার নিয়ম - মুরগীর খামার জীবাণুমুক্ত করার উপায়? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে পশু পালনের জন্য মুরগীর খামার করার নিয়ম গুলো কি কি হয়ে থাকে ও কিভাবে খামার করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে মুরগীর খামার জীবাণুমুক্ত করার উপায় কি কি। যেন আমরা মুরগীকে রোগমুক্ত রাখতে পারি। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আজকের দিনে আপনি যদি মুরগীর ব্যবসা করতে চান তাহলে আপাকে কিছু পদক্ষেপ অনুপ্রেণয় করতে হবে। যেন আমরা ব্যবসা ভালভাবে গড়ে ওঠে। মুরগী ব্যবসা করতে পারলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। শুধু একটি ভালকরে বুঝে শুনে কাজ করতে হবে।

তাই আসুন জেনে রাখি যে, মুরগী ব্যবসা বা পালনের জন্য মুরগীর খামার করার নিয়ম গুলো কি কি হয় ও কিভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে মুরগীর খামার জীবাণুমুক্ত করার উপায় কি। যেন আমরা মুরগীকে ভালোভাবে লালন- পালন করতে পারি। নিম্নে বিস্তারিত......?

মুরগীর খামার করার নিয়মঃ

মুরগির খামার করা মানে কিন্তু বড়সড় রিস্ক না ঠিকমতো প্ল্যান করলে ইজি লাভও সম্ভব। শুধু আপনাকে মন স্থির করে কাজ করতে হবে। নিম্নে দেখে নিন?

  1. সবার আগে আপনাকে ভাল একটা জাইগা নির্বাচন করতে হবে।
  2. খামারটা যেন জনবসতি থেকে একটু দূরে হয়।
  3. পানি ও বাতাস চলাচলের সুবিধা থাকতে হবে।
  4. শব্দদূষণ কম এমন জায়গা বেছে নাও।
  5. ১০০টি মুরগির জন্য প্রায় ২০০–২৫০ স্কয়ার ফিট জায়গা লাগে।
  6. আলো-বাতাস ঢোকে এমন শেড তৈরি করতে হবে।
  7. মেঝে শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। যেন চলাফেরা করতে কোনো সমস্যা না হয়।
  8. ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বড় হয়, ৩০–৩৫ দিনে বিক্রি করা যায়।
  9. খামারে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  10. প্রতিদিন খামার পরিষ্কার করতে হবে।
  11. তাপমাত্রা ২৫–৩০ ডিগ্রি রাখা বেস্ট।
  12. মানসম্মত ফিড ব্যবহার করতে হবে।
  13. ভুট্টা কিংবা মকাই, গম বা চাল, খেতে দিতে হবে।
  14. মুরগীর উৎস বেড়ে তোলার জন্য সয়াবিন বা ডিমপাউডার দিতে হবে খাওয়ার জন্য।
  15. ব্রয়লারদের প্রতিদিন ৩ বেলা খাবার দিতে হয়।
  16. লেয়ারদের জন্য আলাদা ফিড থাকে, যাতে ডিম উৎপাদন বেশি হয়।
  17. নিউক্যাসেল, গামবোরো, এফ এম ডি এগুলোর নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
  18. অসুস্থ মুরগি আলাদা করে রাখতে হবে। যেন এই রোগ বাকি মুরগীর গাঁয়ে না ছড়াই।
  19. ভেটেরিনারি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখলে ভালো।
  20. মুরগির জন্য আলোর ব্যাবস্থা জরুরি, লেয়ারের ক্ষেত্রে ১৪–১৬ ঘণ্টা আলো প্রয়োজন।
  21. শীতের সময় হিটারের ব্যবস্থা রাখতে হবে

মুরগির খামারে সফল হতে হলে নিয়মিত যত্ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, আর সঠিক মার্কেট টার্গেট খুব জরুরি। ঠিকমতো করলে কম সময়ে ভালো আয়ের সোর্স হয়ে যাবে।

মুরগীর খামার জীবাণুমুক্ত করার উপায়ঃ

মুরগির খামার জীবাণুমুক্ত করা মানে পুরো খামারকে ক্লিন সেফ রাখা, যাতে মুরগি অসুস্থ না হয় আর উৎপাদন ভালো থাকে। নিচে সহজভাবে পুরো প্রসেসটা দেওয়া হলো দেখে নিন?

  • মুরগির খামার জীবাণুমুক্ত করার উপায়ঃ

  1. নতুন বাচ্চা আনার আগে খামার অন্তত ১০–১৫ দিন খালি রাখলে জীবাণু অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
  2. এই সময় খামারে মুরগি থাকলে জীবাণুমুক্তকরণ ঠিকমতো হবে না।
  3. এর সাথে আপনি খামারের মেঝে ও ছাদ নিয়মিত পরিষ্কার রাখবেন।

  • খামারের ভেতর পরিষ্কার করাঃ

  1. পুরোনো বিছানা (লিটার) পুরো তুলে ফেলো।
  2. মেঝে, দেয়াল, খাঁচা সবকিছু প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলো।
  3. শুকিয়ে নেওয়া জরুরি, ভেজা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বেশি জমে।

  • ডিটারজেন্ট দিয়ে ওয়াশ করাঃ

  1. পাতলা ডিটারজেন্ট মিশিয়ে পুরো খামার ঘষে ধুয়ে ফেলো।
  2. এতে ময়লা, জমে থাকা বর্জ্য আর ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল নষ্ট হয়।
  3. খাবারের থালা ও পানির পাত্র ভালকরে পরিষ্কার রাখতে হবে।

  •  জীবাণুনাশক স্প্রে করাঃ

  1. ফিনাইল
  2. ফরমালিন
  3. গ্লুটারালডিহাইড
  4. ভিরুসাইড / ব্রড-স্পেকট্রাম ডিসইনফেকট্যান্ট
  5. ব্লিচিং পাউডার (ক্লোরিন)
  6. খেয়াল রাখবে, নির্দেশনা অনুযায়ী পাতলা করে ব্যবহার করতে হবে।

  • পানির লাইন জীবাণুমুক্ত করাঃ

  1. অনেকে ভুলে যায় যে পানির পাইপেও রোগ ছড়ায়।
  2. পাইপে ক্লোরিন বা পারম্যাঙ্গানেট (KMnO₄) দিয়ে ফ্লাশ করে নিতে হবে।
  3. পানি ট্যাংকও ভালোভাবে ধুয়ে নাও।

  • বাইরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখাঃ

  1. খামারের চারপাশ ঘাস বা ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখবে।
  2. পোকামাকড়, ইঁদুর এদের সংখ্যা কমাতে ট্র্যাপ ব্যবহার করা ভালো।
  3. বাইরে থেকে কেউ ঢুকলে পা-পানির ট্রে দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  4. খামারের জন্য আলাদা স্যান্ডেল/জুতা ব্যবহার করো।
  5. খামারে ঢোকার আগে হাত ধোয়া, গাউন/গ্লাভস ব্যবহার করা ভালো।
  6. মুরগি থাকার সময়ও সপ্তাহে ১–২ বার হালকা জীবাণুনাশক স্প্রে দেবে (মুরগির ওপরে না)।

জীবাণুমুক্তিকরণ ঠিকভাবে করলে মর্টালিটি কমে, উৎপাদন বাড়ে, আর ওষুধের খরচও কম পড়ে।

মুরগীর খামার করতে কত টাকা লাগেঃ

মুরগির খামার করতে কত টাকা লাগে এটা পুরোপুরি নির্ভর করে তুমি কতটা স্কেলে আপনি খামার শুরু করতে চান। ছোট স্কেলে ১০০টা ব্রয়লার দিয়ে শুরু করলে সাধারণভাবে ৩০,০০০ থেকে ৪০,000 টাকার মধ্যে একটা বেসিক সেটআপ করা যায়। এর মধ্যে পড়ে শেড বানানো বা ভাড়া, ১০০টা চিক, প্রথম মাসের ফিড, টিকা-ওষুধ, লিটার, পানির পাত্র, ফিডার সব মিলিয়ে মোটামুটি এই বাজেটেই স্টার্ট দেওয়া যায়। তবে যদি একটু বড় করে ৫০০–১০০০ মুরগি নিতে চান,

তাহলে বাজেট ১ থেকে ৩ লাখ পর্যন্তও লাগতে পারে। পুরো ব্যাপারটা হলো যত বেশি মুরগি রাখবা, তত বেশি ফিড আর শেডের খরচ ধরতে হবে। কিন্তু গুড নিউজ হলো সঠিকভাবে করলে ছোট বাজেটেও দ্রুত লাভে আসা যায়। আপনি চাইলে এই ব্যবসা দিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। ইন্সআল্লহ্‌

দেশী মুরগীর বাচ্চা পালনের পদ্ধতিঃ

দেশী মুরগির বাচ্চা পালন করা একটু সেনসিটিভ কাজ, কারণ এরা ব্রয়লার কিংবা লেয়ারের মতো রুক্ষ নয়। টেক কেয়ারটা একটু বেশি লাগে। কিন্তু ঠিকমতো করলে লাভও দারুণ। দেশী মুরগির বাচ্চা পালনের পদ্ধতি হলো বাচ্চা আসার আগেই ঘরটা ক্লিন রাখতে হবে। মেঝেতে শুকনো তুষ/কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে দিতে হবে। রুমে যেন ঠান্ডা না থাকে বাতাস ঢুকবে কিন্তু ঠান্ডা বাতাস না সে ব্যবস্থা করতে হবে।ঘর আগে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করলে বাচ্চা কম অসুস্থ হবে।

বাচ্চাদের সবচেয়ে দরকার হল গরম। তাই ঘরকে প্রথম সপ্তাহ ৩২–৩৪°C রাখতে হবে সপ্তাহ বাড়লে ধীরে ধীরে তাপ কমাবে। মুরগীর খাবার দেওয়ার সময় দেশী বাচ্চাদের খাবারের কোয়ালিটি ইম্পর্ট্যান্ট ও প্রথম ৩০ দিন স্টার্টার ফিড ও পরে গ্রোয়ার ফিড খাবাবেন। আপনি চাইলে ভাঙা ভাত, চালের গুড়া, ভাঙা ডালও দিতে পারেন। কিন্তু বেস্ট হলো রেডিমেড ফিড। মুরগী পালন করতে হলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে তারা ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, ডায়রিয়া/কাশি/হাঁচি আছে কিনা, আচরণ অস্বাভাবিক কি"না।

যদি কোনো সমস্যা দেখো, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশী মুরগির বাচ্চা পালনের আসল ম্যাজিক হলো গরম + পরিষ্কার + সঠিক খাবার + নিরাপদ ঘর। এগুলো ঠিক থাকলে তারা একদম ভাইব নিয়ে বড় হবে আর তোমাকে ভালো লাভ দেবে।

দেশি মুরগির বাচ্চার ঔষধের তালিকাঃ

দেশি মুরগির বাচ্চা পালন করতে কিছু বেসিক ঔষধ ও ভিটামিনের তালিকা জানা থাকলে রোগ কমে, বাচ্চা দ্রুত বড় হয় আর মৃত্যুহারও অনেক কমে যায়। তাই আসুন জেনে রাখি কিছু ঔষুধের নামঃ

  • ভিটামিন ও মিনারেল (প্রতিদিন বা প্রয়োজন অনুযায়ী)

  1. এগুলো বাচ্চার শক্তি, ক্ষুধা আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  2. লিকুইড মাল্টিভিটামিন
  3. ভিটামিন AD₃E
  4. বিকোসিল / সুপার ভিটামিন
  5. ইলেক্ট্রো—সল্ট / ORS (গরমে খুব দরকার)

  • টিকা (Vaccination) – খুব জরুরিঃ

  1. দেশি বাচ্চা বাঁচানোর সবচেয়ে বড় সিক্রেট।
  2. নিউক্যাসেল (F1) – ৭ দিন বয়সে
  3. গামবোরো – ১২–১৪ দিন
  4. নিউক্যাসেল ‘K’ ভ্যাকসিন – ৩০ দিন
  5. এফ.এম.ডি / রানিখেত টিকা – প্রয়োজনে

  • অ্যান্টিবায়োটিক (জরুরি সময় ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো)

  1. কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ব্যবহার করা হয়। ভেট ডাক্তার পরামর্শ নিলে বেস্ট।
  2. এনরোফ্লক্সাসিন (Enrocin, Enrovet)
  3. টাইলোসিন (Tylosin, Tylovet)
  4. অ্যামক্সিসিলিন (Amoxivet)
  5. অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (OTC)
  6. অ্যান্টিবায়োটিক বেশি দিলে ক্ষতি হয়, তাই শুধু রোগ দেখা দিলে।

  • ডায়রিয়া/সাদা পায়খানা প্রতিরোধঃ

  1. নরসালফা (Norsulf)
  2. সালফা ড্রাগ (Sultrim / Sulfaquin)
  3. কি.এম.এন.ও₄ (পারম্যাঙ্গানেট)—পাতলা করে পানি জীবাণুমুক্ত করতে

  • শ্বাসকষ্ট / সর্দি-কাশি চিকিৎসাঃ

  1. টাইলোসিন + ব্রোমহেক্সিন সিরাপ
  2. এনরোফ্লক্সাসিন
  3. মাল্টিভিটামিন + ইলেক্ট্রোলাইট

  • ক্ষুধা বাড়ানোর জন্যঃ

  1. লিভার টনিক
  2. ডাইজেস্টিভ ওয়াটার টনিক
  3. কৃমির ওষুধ (৪৫–৬০ দিন পর)

দেশি বাচ্চা বাঁচানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটা জিনিস টিকা + পরিষ্কার পরিবেশ + সঠিক ভিটামিন।এগুলো ঠিক থাকলে বাচ্চা দ্রুত বড় হয় এবং রোগও কম ধরে।

দেশি মুরগি কত দিনে বড় হয়ঃ

দেশি মুরগি অন্য সব জাতের মতো ফাস্ট গ্রো করে না ওদের গ্রোথটা একদম ন্যাচারাল এবং বেড়ে ওঠতে সময় লাগায়। সাধারণভাবে একটা দেশি মুরগি ৫ থেকে ৬ মাসে পুরোপুরি বড় হয়, মানে তখন ওজন ১.২–১.৮ কেজির মতো হয়। তবে খাবার, যত্ন আর পরিবেশ ভালো হলে ৪ মাসের পর থেকেই চোখে পড়ার মতো বড় হয়ে যায়। দেশি জাতের আসল চার্মটাই হলো ধীরে ধীরে গ্রোথ, ন্যাচারাল টেস্ট আর হেলদি মাংস। তাই সময় একটু বেশি লাগে, কিন্তু রেজাল্ট ১০/১০ একদম অরিজিনাল দেশি ফ্লেভার।

মুরগীর বাচ্চাকে কি খাওয়ানো ভালঃ

মুরগির বাচ্চাকে কি খাওয়ানো ভালো এইটা একদম ক্রিটিক্যাল একটা বিষয়। কারণ প্রথম দিকের খাবারই ঠিক করে দেও যে ওরা দ্রুত ঠিকমতো বড় হবে কি"না। বেস্ট হচ্ছে শুরুতেই স্টার্টার ফিড দেওয়া, কারণ এতে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল সব থাকে ব্যালেন্সডভাবে। পাশাপাশি প্রথম ৭ দিন ইলেক্ট্রোলাইট + ভিটামিন ওয়াটার দিলে ইমিউনিটি একদম টপ লেভেলে থাকে।

আপনি চাইলে ভাঙা ভাত, চালের গুড়া, ডিমের সাদা অংশও অল্প করে দিতে পারো, কুঁড়া, ঝিনুক চূর্ণ ইত্যাদি কিন্তু রেগুলারলি রেডিমেড ফিডই ওদের গ্রোথকে স্মুথ রাখে। আর হ্যাঁ, পানি সবসময় টাটকা আর পরিষ্কার রাখলে বাচ্চারা বেশ চনমনে থাকে ও দ্রুত বাড়ে।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন পশু-পালনের জন্য মুরগীর খামার করার নিয়ম কি ও কিভাবে তৈরি করে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন  যে মুরগীর খামার জীবাণুমুক্ত করার উপায় কি।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন............... www.stylishsm.com



( আপানার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url