ইঞ্জিনিয়ার হতে কত বছর লাগে - ইঞ্জিনিয়ার হতে কত টাকা লাগে? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে ১২ বছর পড়াশুনা করার পরে ইঞ্জিনিয়ার হতে কত বছর লাগে ও কি কি সাব্জেট নিয়ে পড়তে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে ইঞ্জিনিয়ার হতে কত টাকা লাগে ও কিভাবে ফরম্যালেটি পূরণ করতে হয়। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আজকের দিনে দেখা যায় যে একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রী ১২ বছর পড়াশুনা করার পরে নিজের জীবনে সিন্ধান্ত নিজেকে নিতে হয়। তখন অনেক ছেলে মেয়ে সিন্ধান্ত নিতে পারে না যে। আসলেই কি করা উচিত। এখন থেকে একটি জীবনের স্ট্যাগাল শুরু করে।

ইঞ্জিনিয়ার-কত-প্রকার
ইঞ্জিনিয়ার-কত-প্রকার
তাই আসুন জেনে রাখি যে, এই সময়ে আসে আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই তাহলে ইঞ্জিনিয়ার হতে কত বছর লাগে ও কি কি নিয়ে পড়তে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে ইঞ্জিনিয়ার হতে কত টাকা লাগে ও কি কি ফরম্যালেটি পূরণ করতে হয়। নিম্নে বিস্তারিত............?

ইঞ্জিনিয়ার কত প্রকারঃ

ইঞ্জিনিয়ার মূলত বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারে হয়ে থাকে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, একজন ইঞ্জিনিয়ার সিভিল,মেকানিক্যাল, ইলেট্রিক্যাল, ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার হলেন এমন ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞান, গণিত ও প্রযুক্তির জ্ঞান ব্যবহার করে বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান করেন। 

  • ইঞ্জিনিয়ারের প্রকারভেদ

১। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার (Civil Engineer) রাস্তা, সেতু, ভবন, বাঁধ, রেললাইন ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন।

২। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (Mechanical Engineer) যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন, মোটর, মেশিন ও বিভিন্ন মেকানিক্যাল সিস্টেম ডিজাইন তৈরি করতে সক্ষম।

৩। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (Electrical Engineer)  বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন ও যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিদ্যুতিক কাজে নিয়োজিত।

৪। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার (Computer Engineer) কম্পিউটার হার্ডওয়ার, সফটওয়ার ও নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

৫। ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার (Electronics & Telecommunication Engineer) মোবাইল নেটওয়ার্ক, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সিস্টেমের সাথে কাজ করেন।

৬। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (Chemical Engineer) রাসায়নিক উৎপাদন, ওষুধ, সার, তেল ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে কাজ করেন।

৭। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার (Industrial Engineer) উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, শ্রম ও সময় ব্যবস্থাপনা, এবং খরচ কমানোর কাজ করেন।

৮। এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ার (Agricultural Engineer) কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ ব্যবস্থা ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করেন।

৯। আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ার (Architectural Engineer) ভবনের নকশা, গঠন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দেন।

১০। এরোনটিক্যাল বা এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার (Aeronautical/Aerospace Engineer) বিমান, রকেট ও মহাকাশযান ডিজাইন ও উন্নয়ন করেন।

বিশ্বে ইঞ্জিনিয়ারের ধরন শতাধিক, তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় শাখাগুলো হলো 

সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার, এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং।

ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতাঃ

ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা ও ব্যক্তিগত গুণাবলি থাকা প্রয়োজন। নিচে ধাপে ধাপে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো দেখে নিন?

ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা সবার থাকে না এর জন্য কুঠোর পরিশ্রম লাগে। যার জন্য আপনাকে প্রথমে এসএসসি (SSC) বিজ্ঞান বিভাগে ভাল নম্বরে উত্তীর্ণ হতে হবে। তারপরে এইচএসসি (HSC) বিজ্ঞান বিভাগে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে থাকতে হবে। এইচএসসিতে সাধারণত নূন্যতম GPA ৪.০ বা তার বেশি থাকা ভালো, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এটি প্রয়োজন হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে হলে বি.এসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (B.Sc in Engineering) ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশে এই কোর্স সাধারণত ৪ বছর মেয়াদি হিসাবে করানো হয়। আর আপনি যদি ডিপ্লোমা করে থাকেন তাহলে আপনি চাইলে যেকোনো গ্রুপ থেকে পাশ করে ইঞ্জিনিয়ার পড়ার জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। সরকারি ও বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেমনঃ

  1. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET)
  2. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (RUET)
  3. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (KUET)
  4. চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (CUET)
  5. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (AIUB, NSU, BRACU ইত্যাদি)

ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে বিজ্ঞান বিভাগে ভালো ফলাফল করতে হবে। একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এবং প্রযুক্তি ও সমস্যা সমাধানে আগ্রহ থাকতে হবে। তাহলে আপনি ইঞ্জিইয়ারিং পড়তে পারবেন।

ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে কি নিয়ে পড়তে হয়ঃ

ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে পড়াশোনা করতে হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ

  • স্কুল ও কলেজ পর্যায় (এসএসসি ও এইচএসসি)

  1. ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্রথম ধাপ হলো বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করা।
  2. এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই বিজ্ঞান বিভাগে থাকতে হবে।

  • বিশেষ করে নিচের বিষয়গুলোতে ভালো করতে হবে

  1. পদার্থবিজ্ঞান (Physics)
  2. রসায়ন (Chemistry)
  3. গণিত (Mathematics)
  4. উচ্চতর গণিত (Higher Math)
  5. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হওয়ার পর বি.এসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (B.Sc in Engineering) ডিগ্রি অর্জন করতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা সাধারণত ৪ বছর মেয়াদি কোর্স থাকে সেটি পূরণ করতে হয়।

  • ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রধান বিভাগগুলো

  1. সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (Civil Engineering) – ভবন, সেতু, রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ।
  2. ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Electrical Engineering) – বিদ্যুৎ ও সার্কিট সংক্রান্ত বিষয়।
  3. মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Mechanical Engineering) – যন্ত্রপাতি ও মেশিন ডিজাইন ও পরিচালনা।
  4. কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (Computer Engineering) – সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও প্রযুক্তি উন্নয়ন।
  5. ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ECE) – টেলিকমিউনিকেশন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
  6. আর্কিটেকচার (Architecture) – ভবন ডিজাইন ও পরিকল্পনা।
  7. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (Software Engineering) – সফটওয়্যার তৈরি ও প্রোগ্রামিং।
  8. কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Chemical Engineering) – রাসায়নিক পদার্থ ও শিল্প কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া।
  9. এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Agricultural Engineering) – কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি।
  10. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (Textile Engineering) – কাপড় ও পোশাক শিল্প।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের আগ্রহ অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি শাখা বেছে নিতে হবে এবং নিয়মিত পরিশ্রম ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থাকতে হয়।

ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কীঃ

ইঞ্জিনিয়ারের মূল কাজ হলো মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা। তারা কোনো প্রজেক্টের নকশা তৈরি থেকে শুরু করে সেটি বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব ধাপেই যুক্ত থাকেন। একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ভবন, রাস্তা ও সেতু নির্মাণের কাজ তত্ত্বাবধান করে থাকেন। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ ও যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন মেশিন ও ইঞ্জিন ডিজাইন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। আর কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার তৈরি করেন যা আমাদের ডিজিটাল জীবনকে সহজ করে তোলে।

ইঞ্জিনিয়ারের-কাজ-কী

ইঞ্জিনিয়াররা গবেষণা, ডিজাইন, টেস্টিং, সমস্যা সমাধান, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজও করে থাকেন। তাদের কাজের মাধ্যমে সমাজে নতুন উদ্ভাবন ও উন্নয়ন ঘটে, যেমন — স্মার্টফোন, সেতু, গাড়ি, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, কিংবা মোবাইল নেটওয়ার্ক সবই কোনো না কোনো ইঞ্জিনিয়ারের সৃজনশীলতার ফল।

ইঞ্জিনিয়ারের বেতনঃ

একজন ইঞ্জিনিয়ারের বেতন তার কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমনঃ সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নির্মাণ কোম্পানি বা সরকারি প্রকল্পে কাজ করে থাকে, তাদের বেতন গড়ে মাসে বিভিন্ন হয়ে থাকে। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা শিল্প কারখানা বা বিদ্যুৎ কোম্পানিতে কাজ করে ডিগ্রীধারী অনুয়ায়ী তাদের বেতন প্রায় ১,০০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে কম্পিউটার বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি, জারা মাস্টার্স ডিগ্রীধারীর গড়বেতন দাঁড়ায় প্রায় ৩,৫০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন পড়াশুনা করার পর ইঞ্জিনিয়ার হতে কত বছর লাগে ও কি কি করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে ইঞ্জিনিয়ার হতে কত টাকা লাগে বাংলাদেশে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন..................

( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url