ন্যানো টেকনোলজি জনক কে - ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধা? জেনে নিন বিস্তারিত?

আজকে আমরা জানবো আমাদের কাজ সুবিধা করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি জনক কে ও কিভাবে আমরা এই ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে থাকি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধা কি কি। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

আমরা যে আজকের দুনিয়ায় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি তার একমাত্র কারণ হলো এই টেকনোলজি। যার কারণে আজ আমাদের পৃথিবী আরো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। ন্যানো টেকনোলজি আসে আমাদের কাজ আগে থেকে আরো সহজ হয়ে গেছে।

তাই আসুন জেনে রাখি যে, আমাদের কাজ সহজ করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি জনক কে ও কি জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধা কি কি আছে। নিম্নে বিস্তারিত.........?

ন্যানো টেকনোলজি জনক কেঃ

ন্যানো টেকনোলজির জনক হিসেবে মার্কিন পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে গণনা করা হয়। ১৯৫৯ সালে তিনি “There’s Plenty of Room at the Bottom” শীর্ষক এক ঐতিহাসিক বক্তৃতায় প্রথমবারের মতো অণু ও পরমাণুর স্তরে কাজ করার সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেন। এই ধারণাকেই পরবর্তীতে ন্যানো টেকনোলজির ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। তিনি বিভিন্ন ধরনের জিনিস নিয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। যাকে সম্ভবনার ন্যানো টেকনোলজি হিসাবে ধরা হতো।

এছাড়া ১৯৮০-এর দশকে জাপানের বিজ্ঞানী নোরিও তানিগুচি (Norio Taniguchi) এবং মার্কিন বিজ্ঞানী এরিক ড্রেক্সলার (K. Eric Drexler) ন্যানো প্রযুক্তিকে আরও জনপ্রিয় ও ব্যবহারিক পর্যায়ে নিয়ে আসেন।

ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধাঃ

ন্যানো টেকনোলজি আমরা আমাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করে থাকি। এটি আমরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ও ঔষুধ প্রদান, উন্নত ডিভাইস, ও বিভিন্ন উপকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেকোনো জিনিস ব্যবহার করলে কিন্তু তার সুবিধা ও অসুবিধা রয়েই যায় আমাদের জীবনে। তাই আজকে আমাদের আলোচনা থাকবে ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে। আসুন জানি?

  • সুবিধাঃ

  1. চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়ন – ন্যানো কণার মাধ্যমে ক্যান্সার ও জটিল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সহজ হয়। যেটি ব্যবহার করে ঔষুধ সঠিক স্থানে পৌঁচ্ছাতে পারে।
  2. ইলেকট্রনিক্সে অগ্রগতি – ক্ষুদ্রাকৃতির কিন্তু শক্তিশালী কম্পিউটার চিপ, মোবাইল ও ডিভাইস তৈরি করা যায় খুব সহজে।
  3. শক্তি সাশ্রয় – সৌরশক্তি, ব্যাটারি ও ফুয়েল সেলে ন্যানো উপাদান ব্যবহার করে বেশি কার্যক্ষমতা পাওয়া যায়।
  4. পরিবেশ রক্ষা – পানির দূষণ শোধন, বায়ু পরিশোধন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ রক্ষা করতে সক্ষম।
  5. কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ – ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও সার/কীটনাশক কম ব্যবহার সম্ভব।
  6. শিল্পে প্রয়োগ – ন্যানো উপাদান ব্যবহার করে হালকা, মজবুত ও টেকসই যন্ত্রাংশ তৈরি হয়।

  • অসুবিধাঃ

  1. স্বাস্থ্যঝুঁকি – ন্যানো কণা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে একটি মানবদেহের শ্বাসযন্ত্র, হৃদপিণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। 
  2. পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক – অতিরিক্ত ন্যানো কণার ব্যবহার মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্যে মানবদেহ এবং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
  3. উৎপাদন খরচ বেশি – ন্যানো টেকনোলজি উন্নয়ন ও গবেষণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়।
  4. বেকারত্বের আশঙ্কা – অনেক শিল্পে রোবটিক্স ও ন্যানো প্রযুক্তি প্রয়োগে মানুষের কাজকাম কমে যাচ্ছে দিন দিন।
  5. অপব্যবহারের ঝুঁকি – সামরিক প্রযুক্তি বা গুপ্তচরবৃত্তিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরি হতে পারে।
  6. আইন ও নিয়ন্ত্রণের অভাব – এখনো অনেক দেশে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের নিয়ম-কানুন সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। কারণ এটির ব্যবহার সবাই জানে না।

ন্যানো টেকনোলজি এর ব্যবহারঃ

ন্যানো টেকনোলজি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব খাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস, চিকিৎসা, ও ঔষুধ নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার নিচে দেওয়া হলোঃ

  • চিকিৎসা ক্ষেত্রেঃ

  1. ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগ শনাক্তকরণে ন্যানো সেন্সর ব্যবহার করা হয়।
  2. ন্যানো কণার মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয় (Target Drug Delivery)।
  3. কৃত্রিম অঙ্গ ও ডেন্টাল ইমপ্লান্ট তৈরি করে উন্নত করা।

  • ইলেকট্রনিক্সঃ

  1. ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রোচিপ, দ্রুতগতির প্রসেসর ও উন্নত মোবাইল ডিভাইস তৈরি, মেমোরি ডিভাইস এবং সেন্সর তৈরি করে।
  2. বেশি চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম ন্যানো ব্যাটারি।
  3. অতিক্ষুদ্র ও হালকা ওজনের ডিভাইস উন্নয়ন করে।
  4. কম্পিউটারের দ্রুতগতির চিপ তৈরি করতে পারে।

  • শক্তি খাতঃ

  1. সৌরশক্তি উৎপাদনে ন্যানো সোলার সেল ব্যবহার করা যায়।
  2. ফুয়েল সেলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি।
  3. হালকা ও বেশি কার্যকর টারবাইন ব্লেড ও বিদ্যুৎ যন্ত্রাংশ তৈরি।
  4. ন্যানো সার ও ন্যানো কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি।
  5. মাটির গুণগত মান পর্যবেক্ষণের জন্য ন্যানো সেন্সর।
  6. রোগ প্রতিরোধী বীজ তৈরিতে সহায়তা।

  •  শিল্প ও প্রযুক্তিঃ

  1. হালকা কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী যন্ত্রাংশ তৈরি।
  2. মহাকাশযান, বিমান ও গাড়িতে ন্যানো উপাদান ব্যবহার।
  3. রঙ, কসমেটিকস ও টেক্সটাইল শিল্পে ন্যানো কণার প্রয়োগ।

ন্যানো টেকনোলজি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঢুকে পড়েছে। চিকিৎসা, কৃষি, শক্তি, পরিবেশ, শিল্প ও এমনকি মহাকাশ গবেষণায়ও এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।

ন্যানো টেকনোলজি কত প্রকারঃ

ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে আমরা আমাদের দৈনিক কাজে অনেক ব্যবহার করে থাকি। যেটি আমরা ব্যবহার করে আমাদের কাজ আরো সহজ হয়ে ওঠেছে। এই ন্যানো টেকনোলজি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। আপ টু ডাইন ও ডাইন টু আপ। এই জিনিস দ্বারা ন্যানো বস্ত তৈরি করা যায়। ও টপ ডাইন দ্বারা বড় আকারের জিনিস তৈরি হয়।

আপ টু ডাইনঃ আপ টু ডাইন দ্বারা বড় আকারের বস্ত গুলোকে খোদাই করার জন্য ও বড় কাজকে ছোট করার জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ছোট ন্যানো দ্বারা বস্তে পরিণত করা হয়। এই ন্যানো কাজে সব সময় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

ডাইন টু আপঃ এই প্রদ্ধতি দ্বারা রাসায়নিক বিভিন্ন চিপ দ্বারা আণবিক বস্ত ব্যবহার করে যে উপাদান গুলো একসাথে করে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস তৈরি করা হয়। এই গুলোকে ব্যবহার করে স্ব-সংযোজন নীতির মাধ্যমে আণবিক বলা হয়।

ন্যানো প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠাতা কেঃ

ন্যানো প্রযুক্তির জনক ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মূলত রিচার্ড ফেইনম্যান (Richard Feynman)-কে ধরা হয়।তিনি একজন আমেরিকান মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী। ১৯৫৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেকে দেওয়া তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতা “There’s Plenty of Room at the Bottom”-এ প্রথম ন্যানো প্রযুক্তির ধারণা উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমরা পদার্থকে অণু ও পরমাণুর স্তরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

পরে ১৯৭৪ সালে জাপানি বিজ্ঞানী নোরিও তানিগুচি (Norio Taniguchi) প্রথমবারের মতো “Nanotechnology” শব্দটি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ,

ধারণার জনক → রিচার্ড ফেইনম্যান

শব্দ প্রবর্তক → নোরিও তানিগুচি

ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয় কোনটিতেঃ

ন্যানো টেকনোলজি আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি, যা অতি ক্ষুদ্র পরমাণু ও অণুর স্তরে কাজ করে। বর্তমানে এই প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প এবং মহাকাশ গবেষণাসহ বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

( চিকিৎসা ক্ষেত্রে ) রোগ নির্ণয়, ক্যান্সারের চিকিৎসা, ঔষধ দ্রুত শরীরে পৌঁছে দেওয়া (Drug Delivery System)।

( ইলেকট্রনিক্সে ) ছোট আকারের কম্পিউটার চিপ, দ্রুতগতির প্রসেসর, স্মার্টফোন ও সেন্সর প্রযুক্তি।

( শক্তি খাতে ) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, ব্যাটারির আয়ু বৃদ্ধি, ফুয়েল সেল উন্নয়ন।

( পরিবেশ সংরক্ষণে ) দূষিত পানি পরিশোধন, বায়ু শুদ্ধকরণ করতে কাজে আসে।

( কৃষি ক্ষেত্রে ) ফসলের সার, কীটনাশক ও বীজ উন্নয়নে কাজে আসে।

( পোশাক শিল্পে ) জলরোধী কাপড়, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী টেক্সটাইল তৈরি করতে পারে।

( মহাকাশ গবেষণায় ) হালকা ও শক্তিশালী উপাদান তৈরি করতে অভস্ত।

ন্যানো টেকনোলজি আজ স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, শক্তি, কৃষি, পরিবেশ ও মহাকাশ গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বুঝায়ঃ

ন্যানো টেকনোলজি হলো এমন একটি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেখানে পদার্থকে অতি ক্ষুদ্র আকারে, অর্থাৎ ন্যানোমিটার মাত্রায় (১ ন্যানোমিটার = ১ মিটারের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ) নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরমাণু ও অণুর স্তরে পদার্থের গঠন পরিবর্তন করে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত বস্তু, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব।

ন্যানো টেকনোলজি চিকিৎসা, ইলেকট্রনিক্স, পরিবেশ, শক্তি উৎপাদন, কৃষি এবং মহাকাশ গবেষণাসহ জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সহজভাবে বলতে গেলে, ন্যানো টেকনোলজি হলো ক্ষুদ্রতম কণাকে নিয়ন্ত্রণ করে বড় ও কার্যকরী সমাধান তৈরি করার বিজ্ঞান।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানের দিক দিয়ে ন্যানো টেকনোলজি জনক কে ও এর কাজ কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে ন্যানো টেকনোলজি সুবিধা ও অসুবিধা কি কি হয়ে থাকে।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url