নার্স হওয়ার যোগ্যতা - নার্সিং পড়তে কত পয়েন্ট লাগে? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে পড়াশুনা করার ক্ষেত্রে কলেজ জীবন শেষ করে নার্স হওয়ার যোগ্যতা কতটুকু প্রয়োজন হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে নার্সিং পড়তে কত পয়েন্ট লাগে একটা স্টুডেন্টের। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

একজন স্টুডেন্ট তার ১২ বছর পড়াশুনা শেষ করে সে সময় সময় হতাশ হয়ে যায়। যে সে কি করবে এখন কোনটা করলে তার জন্য ভাল হয়। অনেক স্টুডেন্ট অনার্স চয়েস করে আবার অনেক স্টুডেন্ট এই নার্সিং চয়েস করে। এই নার্সিং করলে কিছু এস্টা লাভ পাওয়া যায়।

তাই আসুন জেনে রাখি যে, একজন স্টুডেন্ট এর জন্য নার্স হওয়ার যোগ্যতা কতটুকু লাগে ও কি কি যোগ্যতা রাখতে হয়। তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে নার্সিং পড়তে কত পয়েন্ট লাগে ও কেমন রেজাল্ট দরকার হয়। নিম্নে বিস্তারিত.........?

নার্স হওয়ার যোগ্যতাঃ

নার্স হতে হলে প্রথমে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে নার্স হওয়ার জন্য সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল করতে য।  ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে এস এস সিতে ২.৫০ ও এইচ এস সিতে ২.৫০ রাখতে হয়। সব মিলিয়ে আপনাকে ৬.০০ রাখতে হবে। অন্যদিকে, বিএসসি ইন নার্সিং (বেসিক) কোর্সের জন্য এসএসসিতে নাহলেই জিপিএ ৩.০০ এবং এইচএসসিতে জিপিএ ৩.০০ রাখতে হবে।

বিশেষ করে জীববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো নম্বর থাকা জরুরি। এরপর সরকারি বা বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অথবা বি.এসসি ইন নার্সিং কোর্সে ভর্তি হতে হয়। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রার্থীর মানসিক দৃঢ়তা, সেবার মনোভাব, ধৈর্য, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নার্সিং পড়তে কত পয়েন্ট লাগেঃ

বাংলাদেশে নার্সিং পড়ার জন্য নির্দিষ্ট জিপিএ (GPA) মানদণ্ড রয়েছে, যা প্রতি বছর নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। নার্সিং করার জন্য ডিপ্লোমা ও মিডওয়াইফারী কোর্সের প্রয়োজন হয় ও এইচ এস সিতে ৬.০০ পয়েন্ট রাখতে হবে। আপনার যদি ২.৫০ এর কম থাকে, তাহলে সেটি গ্রহোণযোগ্য হবে না। অপরদিকে বিএসসি ইন কোর্স নার্সিং করার জন্য সর্বোনিম্ন ৭.০০ পয়েন্ট লাগবে 

এর ক্ষেত্রে ৩.০০ পয়েন্ট দিয়ে কোনো জায়গায় চান্স হবে না। বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে ভর্তি যোগ্যতা কিছুটা শিথিল থাকে। সেখানে মোট জিপিএ ৬.০ থাকলেও আবেদন করা যায়। ভর্তি প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা ও মেধা তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তাই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভালো ফলাফল করলেই নার্সিং পড়ার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।

নার্সিং পড়ে কি কি চাকরী করা যায়ঃ

নার্সিং একটি সম্মানজনক ও চাহিদাসম্পন্ন পেশা। নার্সিং পড়ার পর দেশের ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। নিচে নার্সিং পড়ার পর যেসব চাকরি করা যায় তা উল্লেখ করা হলোঃ

  1. স্টাফ নার্স (Staff Nurse)  সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজে সরাসরি রোগীর সেবা দেওয়ার কাজ।
  2. কমিউনিটি হেলথ নার্স (Community Health Nurse)  গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ক্যাম্প করা।
  3. মিডওয়াইফ (Midwife)  গর্ভবতী মা ও নবজাতকের পরিচর্যা ও প্রসবকালীন সেবা প্রদান করে বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরাক্ষা করা।
  4. সাইকিয়াট্রিক নার্স (Psychiatric Nurse)  মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগীদের সেবা দেওয়া।
  5. অপারেশন থিয়েটার নার্স (OT Nurse)  অস্ত্রোপচার কক্ষে ডাক্তারদের সহকারী হিসেবে কাজ করা। এটি অনেক দাত্বিয়বান কাজ।
  6. স্কুল বা কলেজ হেলথ নার্স ( Nurse )  বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।
  7. হাসপাতাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা (Hospital Administrator) – হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও সেবা তদারকি করা। যাকে মানুষ তাড়াতাড়ি সেবা গ্রহণ করতে পারে।
  8. ( বিদেশে নার্স হিসেবে চাকরি )  যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নার্সদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি চাইলে সেখানে অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
  9. রিসার্চ নার্স (Research Nurse) – চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা।
  10. নার্সিং শিক্ষক বা প্রশিক্ষক (Nursing Instructor) – নার্সিং কলেজে শিক্ষকতা করা ও নতুন শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
  11. ( নার্স কেন্দ্র ) নার্সিং পড়া শেষ করে আপনি চাইলে যেকোনো ডিপারমেন্টের নার্স ম্যানেজার, কিংবা সেখানকার সুপারভাইজার হতে পারবেন খুব সহজে।

সুতরাং, নার্সিং পেশা শুধু হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ নয় এটি শিক্ষা, গবেষণা, বিদেশে কর্মসংস্থানসহ নানা ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তৈরি করে।

মানবিক শাখা থেকে কি নার্সিং করা যায়ঃ

হ্যাঁ আপনি চাইলে মানবিক শাখা থেকে নিসন্ধে নার্সিং করতে পারবেন। চসাধারণত নার্সিং পড়তে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জীববিজ্ঞান বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। কারণ নার্সিং পড়াশোনায় মানবদেহ, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, ও শারীরবিদ্যার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে কিছু বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে যারা মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সীমিতভাবে ভর্তি নেয়, কিন্তু সেখানে সাধারণত সহকারী নার্সিং বা নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স করা যায়, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ক্ষেত্রে আপনি মানবিক থেকে কখনো আবেদন করতে পারবেন না।

নার্সিং পড়ার খরচ কতঃ

নার্সিং পড়ার খরচ নির্ভর করে আপনি সরকারি না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়বেন তার উপর। বাংলাদেশে এই খরচের মধ্যে ভর্তি ফি, টিউশন ফি, বই-পুস্তক, ইউনিফর্ম, ল্যাব ফি ও হোস্টেল খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো দেখে নিন?

  • সরকারি নার্সিং কলেজে খরচঃ

  1. সরকারি নার্সিং কলেজে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
  2. ভর্তি ফি: প্রায় ১,০০০ – ২,০০০ টাকা
  3. টিউশন ফি: মাসে ২০০ – ৩০০ টাকা
  4. মোট আনুমানিক খরচ (৪ বছর): ১৫,০০০ – ২৫,000 টাকা
  5. এছাড়া, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সরকারি ভাতা ও স্টাইপেন্ড পেয়ে থাকে।

  • বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে খরচঃ

  1. বেসরকারি নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
  2. ভর্তি ফি: ২০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা
  3. টিউশন ফি: মাসে ৩,০০০ – ৬,০০০ টাকা
  4. মোট আনুমানিক খরচ (৪ বছর)  ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

যদি আপনি কম খরচে ভালো সুযোগ চান, তাহলে সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি হওয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত। তবে যারা দ্রুত ভর্তি ও ভালো পরিবেশ চান, তারা বেসরকারি কলেজেও ভর্তি হতে পারেন শুধু খরচ তুলনামূলক বেশি হবে।

নার্সিং পড়ার সর্বোচ্চ বয়স কতঃ

বাংলাদেশে নার্সিং পড়ার জন্য বয়সের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা নেই। তবুও প্রতি বছর নার্সিং ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ক্ষেত্রে বয়স উল্লেখ করা থাকে। সাধারণভাবে নার্সিং কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ২৫ বছর নির্ধারিত। অর্থাৎ, এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে যারা ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে রয়েছে, তারা নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

তবে বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতে কিছু ক্ষেত্রে বয়সসীমা কিছুটা শিথিল থাকে, সেখানে সর্বোচ্চ ২৭ বা ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হয়। অন্যদিকে, যারা সরকারি চাকরির আওতায় নার্স হিসেবে কাজ করতে চান, তাদের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বয়সসীমা মেনে চলতে হয়, সাধারণত সেটি ৩০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সুতরাং, নার্সিং পেশায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উচিত সময়মতো প্রস্তুতি নিয়ে নির্ধারিত বয়সের মধ্যেই ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ বয়সসীমা পেরিয়ে গেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আর থাকে না।

নার্সিং এর ১১টি পয়েন্ট কি কিঃ

নার্সিং হওয়ার যোগ্যতা ও নার্সিং পড়তে কত পয়েন্ট লাগে আমরা তা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। এবার জানবো যে এই নার্সিং করতে হলে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর কি কি দক্ষতা থাকতে হবে। আসুন জেনে নি?

  1. মানবসেবা মূল লক্ষ্য – নার্সিং একটি মানবিক পেশা, যার মূল উদ্দেশ্য অসুস্থ ও আহত মানুষের সেবা করা।
  2. মূল্যায়ন - একজন নার্সের কাজ হলো একটি রোগীর অবস্থা কেমন আছে, তার প্রয়োজনীয় কি কি জিনিস লাগবে সেটি দেখা। ও সময় মতো রির্পোট করা ডাক্তারের কাছে।
  3. পেশাদারিত্ব প্রয়োজন – একজন নার্সকে সবসময় দায়িত্বশীল, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং পেশাদার হতে হয়।
  4. শিক্ষাগত যোগ্যতা – নার্স হতে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করতে হয়, বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে ভালো ফলাফল জরুরি নার্সিং করার ক্ষেত্রে।
  5. নার্সিং ডিগ্রির ধরণ – নার্সিংয়ে Diploma in Nursing, B.Sc. in Nursing, এবং Post Basic B.Sc. in Nursing এই তিন ধরণের কোর্স রয়েছে। আপনি চাইলে আপনার মনের মত যেকোনো একটি করতে পারেন।
  6. প্রায়োগিক শিক্ষা – নার্সিং পড়াশোনায় তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং নিতে হয়।
  7.  চাকরির সুযোগ – সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, এনজিও, এমনকি বিদেশেও নার্সদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
  8. বেতন ও সুবিধা – অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নার্সদের ভালো বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়, বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে।
  9. নার্সিংয়ের দক্ষতা – রোগীর যত্ন নেওয়া, ইনজেকশন দেওয়া, ওষুধ প্রয়োগ, জরুরি পরিস্থিতি সামলানো ইত্যাদি কাজ করতে হয় দক্ষতার সঙ্গে।
  10. মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন – নার্সিং পেশায় রোগীর কষ্ট দেখা, দীর্ঘ সময় কাজ করা ও মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা থাকতে হয়।
  11. ক্যারিয়ার উন্নতির সুযোগ – উচ্চতর ডিগ্রি (M.Sc. in Nursing, Nursing Administration ইত্যাদি) করলে নার্সিং শিক্ষক বা হাসপাতাল প্রশাসক হিসেবেও কাজ করা যায়।

একজন নার্স হতে হলে আপনার মধ্য এই সব দক্ষতা ও যোগ্যতা রাখতে হবে।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন কলেজ জীবন শেষ করে নার্স হওয়ার যোগ্যতা কি কি রাখতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে নার্সিং পড়তে কত পয়েন্ট লাগে একজন স্টুডেন্টের।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url