শ্রী কৃষ্ণের পুরো নাম কি - শ্রী কৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র? বিস্তারিত জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে দেবতাদের মধ্য সেরা ভগবান শ্রী কৃষ্ণের পুরো নাম কি ও তিনি কি করতেন। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে শ্রী কৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র কি ও এই মন্ত্র কিভাবে পালন করতে হয় গভবানের চরণে। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আমরা যারা সনাতনী মানুষ আছি তারা আমরা সবাই কোনো না কোনো দেবতার পূজা করে থাকি। আমরা মানি যে পূজা হোক কিংবা অর্চনা সবাই নিজের মন থেকে করলেই গভবান খুশি হোন। এই জন্য আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের দেবতার পূজা করে থাকি।
![]() |
শ্রী-কৃষ্ণের-পুরো-নাম-কি |
শ্রী কৃষ্ণের পুরো নাম কিঃ
শ্রীকৃষ্ণের পুরো নাম হলো “শ্রীকৃষ্ণ বসুদেব”। হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী, শ্রী কৃষ্ণের কোনো একক নাম পাওয়া যায় নি। গীতা অনুযায়ী কৃষ্ণ নাম ধরা হয় কালো বা গাঢ় নীল। তিনি ছিলেন বসুদেব ও দেবকীর পুত্র। এজন্য তাঁকে অনেক সময় “বাসুদেব কৃষ্ণ” বলেও ডাকা হতো। এছাড়া কৃষ্ণের আরও অনেক নাম আছে, যেমন – গোবিন্দ, মাধব, গোপাল, কানাই, নন্দলাল, মুরারি এই গুলো নামের মধ্য কৃষ্ণ নাম বেশি প্রচালিত মানুষের কাছে।
- শ্রী কৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রঃ
মানুষের মন ছুয়া শ্রী কৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র হলোঃ "হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎ পথে। গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্ততে।।" ঔ নমঃ ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমঃ মমঃ।
- শ্রী কৃষ্ণের প্রমাণ মন্ত্র ( ২)
"ওঁ কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে।
প্রণতঃ ক্লেশনাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ॥"
পুরো অর্থ হলোঃ
আমি শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম জানাই, যিনি বাসুদেবরূপে অবতীর্ণ, যিনি সকলের অন্তরে বিরাজমান পরমাত্মা, যিনি ভক্তদের সকল দুঃখ-ক্লেশ দূর করেন এবং যিনি গোবিন্দ নামে প্রসিদ্ধ।
ভক্তরা এই মন্ত্র প্রতিদিন ভোরে বা পূজার সময় শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করলে মানসিক শান্তি, ভক্তি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ হয় ও গভবানের প্রতি বিশ্বাস আসে।
শ্রী কৃষ্ণের পিতার নাম কিঃ
শ্রী কৃষ্ণের পুরো নাম কি তা আমরা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। এবার জানবো যে তার পিতার নাম কি। শ্রীকৃষ্ণের পিতার নাম হলো বাসুদেব। পুরাণ অনুযায়ী, মথুরার যদুবংশে বাসুদেব ও দেবকীর গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়। তবে কংসের ভয়ে নবজাতক কৃষ্ণকে গোপালক নন্দ ও যশোদার কাছে গোপালপুরী (গোকুলে) লালন-পালনের জন্য পাঠানো হয়। সেই কারণে অনেক সময় মানুষ নন্দকে-ও কৃষ্ণের পালক পিতা হিসেবে মান্য করে। অর্থাৎ, কৃষ্ণের জৈবিক পিতা ছিলেন বাসুদেব, আর পালক পিতা ছিলেন নন্দ মহারাজ।
শ্রী কৃষ্ণের স্নান মন্ত্র কিঃ
শ্রীকৃষ্ণের স্নান মন্ত্র অত্যন্ত পবিত্র এবং ভক্তিভরে পাঠ করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করা যায়। সাধারণভাবে পূজা-পাঠে ভগবানের স্নান করানোর সময় নিচের স্নান মন্ত্র বলতে হয়।
"ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতী
নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু"
- শ্রী কৃষ্ণের স্নান মন্ত্র ( ২ )
“ওঁ দেবকীনন্দনায় নমঃ,
ওঁ বাসুদেবায় নমঃ,
ওঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ,
ওঁ গোবিন্দায় নমঃ,
ওঁ মথরায় নমঃ,
ওঁ গোপালায় নমঃ।”
এই মন্ত্র উচ্চারণ করে গঙ্গাজল, দুধ, দই, মধু, ঘি ও মিষ্টি জল দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে স্নান করানো হয়।
শ্রী কৃষ্ণের মাতার নাম কিঃ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাতার নাম হলো মাতা দেবকী। পুরাণ মতে, শ্রীকৃষ্ণ মথুরার কারাগারে মাতা দেবকী ও পিতা বসুদেব-এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্মের পর অত্যাচারী কংসের ভয়ে বসুদেব মহারাজ কৃষ্ণকে গোপালপুরে নন্দরাজ ও যশোদার কাছে পৌঁছে দেন। তাই শ্রীকৃষ্ণের জৈবিক মাতা দেবকী, আর লালন-পালনকারী মাতা ছিলেন যশোদা।
গভবান শ্রী কৃষ্ণের বাঁশির নাম কিঃ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির নাম হলো "মুরলী" বা "বেণু"। পুরাণ ও ভক্তিগ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় মুরলীধর বা বেণুমাধব, কারণ তিনি সর্বদা তাঁর প্রিয় বাঁশি বাজাতেন। এই বাঁশির সুরে গোপী, গোপাল, এমনকি পশু-পাখিরাও মোহিত হয়ে যেত। কৃষ্ণের বাঁশির মধুর ধ্বনি ভক্তদের হৃদয়ে প্রেম, ভক্তি ও আনন্দ জাগায়। এ ছাড়া তার বাঁশিকে বংশী বা ভ্রামরী বলা হত। সব নামের মধ্যেই তাঁর ঐশ্বরিক সুরের মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়।
শ্রী কৃষ্ণ দেহত্যাগ কবে করেনঃ
হিন্দুধর্ম সূত্র অনুযায়ী, ভগবান খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ভালকা তীর্থে সালে কলিযুগের সূচনা হিসাবে শ্রীকৃষ্ণ দেহত্যাগ করেন। ভৃগু ঋষির বংশধর জরা নামের এক শিকারি ভুলবশত শ্রীকৃষ্ণকে হরিণ ভেবে তাঁর পায়ে বাণ নিক্ষেপ করে। সেই বাণ পায়ে বিঁধে গেলে শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে তাঁর লীলা সমাপ্ত করে স্বধামে (বৈকুণ্ঠে) প্রত্যাবর্তন করেন। কুরুক্ষেত্রে প্রায় ৩৬ বছর পর তিনি এই নশ্বর দেহ ত্যাগ করে বৈকুন্ঠে গমন করেন।
শ্রী কৃষ্ণের প্রেমের বাণীঃ
শ্রী কৃষ্ণের পুরো নাম কি আমরা সবাই জানি, এবং তার প্রেমের বাণী হিসাবে কিছু শিখে নি? শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের বাণী ভক্তি, ভালোবাসা আর জীবনের প্রকৃত অর্থকে উপলব্ধি করায়। তাঁর বাণীতে মানব হৃদয়কে ভক্তি, ন্যায় আর সত্যের পথে পরিচালিত করার শিক্ষা আছে। নিচে কিছু শ্রীকৃষ্ণের প্রেমময় বাণী দেওয়া হলোঃ
- "যখনই ধর্মের অবনতি হয় আর অধর্ম বেড়ে যায়, তখনই আমি আবির্ভূত হই।"
- "যে যেমন ভাবে আমাকে ভজে, আমি তেমনি তার প্রতিফল দিই।"
- "কাজ করো, কিন্তু ফলের আসক্তি রেখো না।"
- "প্রেম কখনো অধিকার চায় না, প্রেম শুধু দান করতে জানে।"
- "ভক্ত যে প্রেম দিয়ে আমাকে ডাকে, আমি সেই প্রেমেই বাঁধা থাকি।"
- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন তোমার কর্মের কাজ তোমাকে এই পৃথিবীতে দিয়ে যেতে হবে।
- কখনো মন খারাপ থাকলে আমাকে সরণ করবে। আমি নিষ্পাপ হয়ে তোমার মনে জড়াবো।
- তোমার কপালে যেটা লিখা থাকবে তুমি সেটাই পাবে। এটি বিধির-বিধান।
- যেন শুনে নিজের কাজের জন্য একটা সৎ মানুষের মনে কখনো দুঃখ-কষ্ট দিবা না।
- একটা মানুষের মন ভাঙ্গা মানে একটি মসজিদ-মন্দির ভাঙ্গার সমান পাপ কাজ হয়ে থাকে।
- তুমি সার্থ ছাড়া যদি মানুষকে ভালবাসে একবার দেখ। তোমার মনে খুব শান্তি লাগবে।
- মানুষ যদি একবার নিজের মন থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ডাকে। তাহলে সে অবশ্যই সাড়া দিবে।
শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের বাণী মূলত আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের ভালোবাসা হলো ভক্তি, আত্মসমর্পণ, নিঃস্বার্থ দান আর পরম সৃষ্টিকর্তার সাথে মিলনের আনন্দ।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন সৃষ্টি কর্তার শ্রেষ্ঠ শ্রী কৃষ্ণের পুরো নাম কি ও তার হিস্ট্রি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে শ্রী কৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র কি ও কিভাবে পালন করে।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url