কুরবানি দেওয়ার নিয়ম - পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম কি? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে পবিত্র কুরবানি ঈদ উপলক্ষে  কুরবানি দেওয়ার নিয়ম গুলো কি কি ও কেমন হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এই পবিত্র ঈদে পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম কি ও কেমন করে দিতে হয়। আসুন জানি?

ভূমিকাঃ

সামায় ঈদের পরে দেখা দেয় এই পবিত্র কুরবানি ঈদ। এই ঈদে গরু ও ছাগলের চলে কেনাকাটার মেলা। অধিক মানুষ হাঁট থেকে গরু ছাগল কিনে থাকেন কুরবানি ঈদে জবাই দেওয়ার জন্য। এই ঈদে বাসায় বাসায় মাংস রান্না করা হয়। ও বড়লোক থেকে শুরু করে গরিব মানুষ পর্যন্ত এই দিনে মাংস খেয়ে থাকে।

কুরবানি-দেওয়ার-নিয়ম
কুরবানি-দেওয়ার-নিয়ম   

কেননা এই কুররানি দেওয়া মাংসকে আল্লা্‌র সিন্নি বলে মনে করা হয়। তাই আসুন জেনে রাখি যে এই পবিত্র ঈদে  কুরবানি দেওয়ার নিয়ম গুলো কি কি। ও তার সাথে সাথে এটাও জানুন যে পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম কি। নিম্নে বিস্তারিত............।

কুরবানি দেওয়ার নিয়মঃ

কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। কুরবানি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং ত্যাগের শিক্ষা অর্জন করা। কুরবানি করার জন্য প্রথমে নিয়ত করতে হয়, তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে পশু জবাই করতে হয়। কুরবানির পশু হতে হবে সুস্থ, পূর্ণ বয়স্ক ও নির্দোষ (অন্ধ, ল্যাংড়া বা খুব দুর্বল হলে চলবে না। 

ছাগল,ভেড়া এই সব কুরবানি দিলে এদের বসয় ১ বছর হতে হবে। গরু ও মোষর ক্ষেত্রে ২ বছর হতে হবে। তাহলে আপনার কুরাবি হালাল হবে আল্লা্‌র কাছে। জবাই করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পশুর গলা কাটা হয় এবং কুরবানির পর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়—এক ভাগ গরিবের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য, আর এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য।

কুরবানি শুধু ধনী ও সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব, যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। কুরবানির অর্থ, নিয়ম ও সদিচ্ছা ঠিক রেখে ইবাদত করলে আল্লাহর নিকট তা কবুল হয়।

পশু জবাই করার সঠিক নিয়মঃ

 কুরবানি দেওয়ার নিয়ম ও পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম কি তা ইসলামিক কুরআন অনুযায়ী জেনে নিন? ইসলাম অনুযায়ী পশু জবাই করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ও সুন্নাতভিত্তিক নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি। সর্বপ্রথম, পশুকে ভালোভাবে খাওয়ানো ও পানি পান করানো উচিত এবং দয়ালু আচরণ করতে হবে। এরপর জবাইয়ের সময় পশ্চিম দিকে পশুকে ডান পাশে শোয়াতে হবে।

এরপর ধারালো ছুরি ব্যবহার করে পশুর গলার চারটি মূল অংশ (শ্বাসনালী, খাদ্যনালী এবং দুটি ধমনী) কেটে দেওয়া হয়। জবাই করার সময় অবশ্যই বলা উচিত “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”। এটি না বললে ইসলামী শরিয়তে পশু হালাল হয় না। পশুর মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি চামড়া ছাড়ানো বা অঙ্গ কাটার ভুল কখনো করবেন না। 

কুরবানি দেওয়ার সময় ছুরি অবশ্যই ধারালো রাখবেন যাতে পশু বেশি কষ্ট না পায়। এছাড়া জবাইকারীকে মুসলমান হতে হবে, এবং তাকে জবাইয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে যে এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত।

সর্বোচ্চ কত ভাগে কুরবানি দেওয়া হয়ঃ

কুরবানি দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী ইসলামী শরিয়ত দ্বারা লেখা একটি বড় পশু—যেমন গরু, উট বা মোষ যদি কুরবানি দেওয়া হয়। তাহলে সর্বোচ্চ ৭ জন ব্যক্তি মিলে কুরবানি করতে পারেন হালাল হিসাবে। অর্থাৎ, একটি গরু বা উটে সর্বোচ্চ সাতটি অংশে ভাগ করা যায়, এবং প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী আলাদাভাবে একটি কুরবানির নিয়ত রাখতে হবে। তবে ছোট পশু—যেমন ছাগল, ভেড়া, দুম্বা—একজন ব্যক্তি একাই কুরবানি দিলে ভাল হয়।

এই সাত জনের প্রত্যেকের কুরবানির উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর জন্য কুরবানি করা, কেউ কেউ যদি শুধু মাংস পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানিতে অংশ নেয়, তবে তা শরিয়তসম্মত হবে না। তাই শরিয়াহ অনুযায়ী, একটি গরু বা উট সর্বোচ্চ সাত জনের মাঝে কুরবানি দেওয়া যায়, তার বেশি কোনো ভাবেই সম্ভব না কুরাবি দেওয়ার জন্য।

কুরবানির তিনটি উপাদান কি কিঃ

কুরবানি দেওয়ার নিয়ম ও কুরবানির ইবাদতকে সঠিকভাবে আদায় করতে হলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা অংশ অবশ্যই থাকতে হয়। এই তিনটি উপাদান না থাকলে কুরবানি গ্রহণযোগ্য হয় না আল্লাহ্‌র কাছে। তা নিম্নে দেখে নিন?

  •  নিয়ত উদ্দেশ্যঃ  কুরবানি দেওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়ত করা। এটা শুধু মাংস লাভের জন্য নয়, বরং ত্যাগ ও ইবাদতের মনোভাব নিয়ে কুরবানি দিতে হয়।
কুরবানির-তিনটি-উপাদান-কি-কি
  •  যোগ্য পশুঃ  কুরবানির জন্য শরিয়তসম্মত ও সুস্থ পশু বেঁছে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন যেন পশুটি নির্দিষ্ট বয়সের হয়। (যেমন গরু কমপক্ষে ২ বছরের, ছাগল ১ বছরের), এবং তাতে শারীরিক কোনো ত্রুটি, কাটাছেরার দাগ যেন না থাকে।
  • সঠিক সময়ঃ  কুরবানি দিতে হয় জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। এর আগে বা পরে কুরবানি করলে তা কবুল হয় না আল্লাহ্‌র কাছে।

এই তিনটি উপাদান সঠিকভাবে পালন করলে কুরবানি ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী আদায় হয় এবং আল্লাহর কাছে কুরবানি কবুল হওয়ার আশা করা যায়।

কোন কোন পশু দ্বারা কুরাবনি হবে নাঃ

ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী কুরবানির জন্য পশু নির্বাচনে কিছু শর্ত রয়েছে। যেসব পশুর মধ্যে শরিয়ত নির্ধারিত শারীরিক ও বয়সসংক্রান্ত দোষ থাকে, সেসব পশু দ্বারা কুরবানি হবে না। যেসব পশু দ্বারা আপনি কুরাবনি দিতে পারবেন না তা নিম্নে দেখে নিন?

  1. অন্ধ বা এক চোখে অন্ধ পশু কুরাবানির জন্য জায়েজ হবে না।
  2. খোঁড়া বা পঙ্গু পশু, যা হেঁটে কুরবানির স্থানে পৌঁছাতে অক্ষম।
  3.   রোগাক্রান্ত পশু, যার শরীর খুব দুর্বল কুরাবানির জন্য জায়েজ হবে না।
  4. কান, লেজ বা শিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি কাটা পশু।
  5. জন্ম থেকে কানা বা কাটাছেরা আছে সেসব পশু কুরাবানির জন্য জায়েজ হবে না।
  6.  দাঁত নেই বা অধিকাংশ দাঁত পড়ে গেছে এমন পশু কুরাবানির জন্য জায়েজ হবে না।
  7. অতিরিক্ত দুর্বল পশু, যাতে মাংসের চেয়ে হাড় বেশি কুরাবানির জন্য জায়েজ হবে না।
  8. পথে পাওয়া পশু কুরাবানির জন্য জায়েজ হবে না।
  9. আপনি শুধু আপনার বাড়িতে পোষা গরু,ছাগল, মহিষ, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানি দিতে পারবেন।
  10. এই সব পশু ছাড়া কুরবানি দিলে আপনার কুরাবনি জায়েজ হবে না ও আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হবে না।

সুতরাং, কুরবানির জন্য ভাল পশু বেঁছে নিন এবং এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি, যাতে কুরবানি সহীহ হয় ও আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা জরুরীঃ

কুরবানি দেওয়ার নিয়ম ও ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী কুরবানির গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করা সুন্নত এবং তা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আদর্শ বলে মনে করা হয়। কুরবানির মূল উদ্দেশ্য শুধু মাংস খাওয়া নয়, বরং তা হল ত্যাগ, সহানুভূতি ও সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করা মানুষের মধ্য।

  1.  এক ভাগ গরিব ও মিসকিনদের জন্য যারা এই মাংসের আসল অধিকারী।
  2. এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্য যেন সবার মধ্য দিয়ে সবাই সুন্নাত পায় ও ভালবাসা বাড়ে।
  3.  এক ভাগ নিজের ও পরিবারের জন্য যাতে এই সিন্নির মাংস যেন প্রত্যেক জন ভোগ করতে পারে।

যদিও কুরবানির গোশত পুরোটাই নিজে খাওয়া জায়েজ আছে ও যদি কেউ তিন ভাগ করার ক্ষেত্রে কমবেশি করে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে উত্তম হলো এই তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া, যাতে সমাজের দরিদ্ররাও ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে প্রত্যেকটা মানুষ। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আমল থেকেও প্রমাণিত করা হয়েছে।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন কুরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কুরবানি দেওয়ার নিয়ম কি কি থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম কি ও কেমন করে দিতে হয়।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url