রাতকানা রোগের লক্ষণ কি - কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়? বিস্তারিত জেনে নিন?

আজকে আমরা জানবো যে শরীরের রোগের ক্ষেত্রে রাতকানা রোগের লক্ষণ কি ও এই রোগ কেন হয়ে থাকে আমাদের শরীরে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয় আমাদের শরীরে। আসুন জানি? 

ভূমিকাঃ

আমরা আমাদের শরীর সঠিক ও সতেজ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। যাতে করে আমাদের শরীর ভাল থাকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে কিছু প্রোটিনের অভাবে আমাদের শরীরে রাতকানা রোগ দেখা দেয়।

রাতকানা-রোগের-লক্ষণ-কি
রাতকানা-রোগের-লক্ষণ-কি   
তাই আসুন জেনে রাখি যে, কি করলে আমাদের জীবনে ও আমাদের শরীরে রাতকানা রোগের লক্ষণ কি সেটি যেন দেখা না দেয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়। নিম্নে বিস্তারিত.........?

রাতকানা রোগের লক্ষণ কিঃ

রাতকানা বা নাইট ব্লাইন্ডনেস (Night Blindness) হলো চোখের একটি সমস্যা, যেখানে অন্ধকারে বা আলো কমে গেলে স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত ভিটামিন-এ এর অভাবের কারণে হয়ে থাকে। রাতকানা রোগীদের একটা বড় সমস্যা হলো তারা হঠ্যাৎ করে আলোতে গেলে তাদের চোখ আলো মেনে নিতে পারে না। ও রাতে তারা স্পষ্টভাবে কিছুই দেখতে পারে না। তাদের কাছে সবকিছু ঝাপসা মনে হয়। 

রাতকানা রোগীর চোখে পানি সহজে আসে না ও শুষ্কতা অনুভূতি হয়। চোখের যত্ন না নিলে কিছু ক্ষেত্রে চোখে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তিভাব হতে পারে। চোখে ভাল করে দেখতে না পাওয়ার কারণে বারবার পড়ে যাওয়া। যদি কারও এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারকে দেখানো জরুরি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে এই সমস্যা গুরুতর হতে পারে।

কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়ঃ

ডাক্তারের মতে, ভিটামিন এ-এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে মানুষের। এই রোগকে রড়োপসিন বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ভিটামিন-এ চোখের রেটিনা (Retina) সুস্থ রাখে এবং অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন শরীরে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি হয় শরীরে, তখন চোখ আলো থেকে অন্ধকারে মানিয়ে নিতে পারে না, ফলে অন্ধকারে কিছু স্পষ্টভাবে দেখা যায় না।

এ অবস্থাকেই রাতকানা রোগ বলা হয়। তাই রাতকানা প্রতিরোধে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ গাজর, কচুপাতা, শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছের তেল, লিভার ইত্যাদি খাওয়া খুবই উপকারী আমাদের শরীর ও চোখ ভাল রাখতে।

রাতকানা রোগের ঔষুধঃ

রাতকানা রোগের লক্ষণ কি সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। কিন্তু এই রাতকানা রোগ আমাদের শরীরে ভিটামিন এ-এর অভাবে হয়ে থাকে। তাই এর প্রধান চিকিৎসা হলো শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ সরবরাহ করা ও প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া। সাধারণত ডাক্তাররা রোগের অবস্থা অনুযায়ী ঔষুধ দিয়ে থাকেন। তাহলোঃ

  • ভিটামিন-এ ক্যাপসুলঃ

শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিশেষ ডোজে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকার শিশুদের জন্য নিয়মিত ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে।

  • ভিটামিন-এ ট্যাবলেট বা সিরাপঃ

ডাক্তাররা রোগীর বয়স ও অবস্থা অনুযায়ী ভিটামিন-এ ট্যাবলেট বা সিরাপ প্রেসক্রাইব করেন।ৎ

  • চোখের ড্রপ (Artificial tears) 

চোখ শুকিয়ে গেলে বা জ্বালাপোড়া কমাতে কৃত্রিম চোখের পানি জাতীয় ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। (ডাক্তারের পরামর্শে)।

  • সুষম খাদ্য গ্রহণঃ

গাজর, লিভার, ডিম, দুধ, সবুজ শাক, কচুপাতা, লাল শাক, কুমড়া, আম, পেঁপে, মাছের তেল ইত্যাদি নিয়মিত খেতে হবে। যাতে করে আমার চোখ ও শরীর ভাল থাকে।

রাতকানা রোগের ঔষুধ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। শুধু বাজার থেকে কিনে খেলে অনেক সময় ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। তাই সাবধান?

রাতকানা রোগের কারণ কিঃ

রাতকানা রোগ বা নাইট ব্লাইন্ডনেস মূলত চোখের রেটিনায় (Retina) ভিটামিন-এ এর ঘাটতি হওয়ার কারণে হয়। রেটিনা চোখে যখন আলো গ্রহণ পরে তখন আমরা অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা পায়। যখন শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ থাকে না, তখন রেটিনা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে অন্ধকারে কিছু দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। রাতকানার প্রধান কারণগুলো হলোঃ

  1. ভিটামিন-এ এর ঘাটতি হলে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে (যেমন গাজর, শাক, ডিম, মাছের তেল, দুধ)
  2. চোখের রোগের জন্য ক্যাটারাক্ট (Cataract), রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা (Retinitis Pigmentosa) এ গুলো দায়ী।
  3. লিভার ভিটামিন-এ সংরক্ষণ করে। লিভারে অসুখ থাকলে শরীরে ভিটামিন-এ কমে যেতে পারে। ফলে রাতকানা রোগ হয়
  4. আমাদের শরীর যখন ভিটামিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাই না। তখন এই রোগ দেখা দেয়। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির কারণে এই রোগ বেশি দেখা দিতে পারে।
  5.  কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণে মানুষের রাতকানা রোগ হয়ে থাকে।

তাই রাতকানা রোগ এড়াতে হলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, সুষম খাদ্য গ্রহণ ও চোখের নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি।

রাতকানা রোগের প্রতিকারঃ

রাতকানা রোগের সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। বিষেষজ্ঞদের মতে, এই রাতকানা রোগ কিছু ক্ষেত্রে রোগের জন্য ঘটে থাকে। আবার কারো বংশগত হয়ে থাকে। এই রাতকানা রোগের প্রধান প্রতিকার হলো শরীরে ভিটামিন-এ এর ঘাটতি পূরণ করা এবং চোখকে সুস্থ রাখা। যেহেতু এটি সাধারণত খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির অভাবজনিত কারণে হয়, তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।রাতকানা রোগের প্রতিকারের উপায় হলোঃ

  1. আপনাকে প্রতিদিন গাজর, লাল শাক, কুমড়া, কচুপাতা, ডিম, দুধ, মাছের তেল, কলিজা, আম, পেঁপে ইত্যাদি খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
  2. ডাক্তারদের পরামর্শে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্দিষ্ট ডোজে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়া উচিত।
  3. শুধু ভিটামিন-এ নয়, পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অন্যান্য পুষ্টি গ্রহণ করতে হবে যাতে চোখ সুস্থ থাকে।
  4. চোখ ঘষা, অতিরিক্ত আলোতে তাকানো বা ধুলাবালি থেকে চোখকে রক্ষা করতে হবে।
  5. ক্যাটারাক্ট, ডায়াবেটিস বা রেটিনার সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।
  6. সরকার শিশুদের জন্য নিয়মিত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। শিশুদের তা অবশ্যই খাওয়ানো জরুরি।

তাই রাতকানা প্রতিকারে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ভিটামিন-এ গ্রহণ ও চোখের যত্ন নেওয়া। আর মনে রাখবেন যে ভিটামিন এ-এর অভাবে আমাদের এই ধরনের রোগ হয়ে থাকে। 

রাতকানা রোগ কি ভাল হয়ঃ

হ্যাঁ, রাতকানা রোগ অনেক ক্ষেত্রে ভাল হয়ে যায়, তবে সেটা নির্ভর করে এর কারণ ও চিকিৎসার ধরন কেমন তার ওপর। যদি রাতকানার কারণ হয় ভিটামিন-এ এর ঘাটতি দ্বারা হয়। তাহলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেলে বা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন-এ ক্যাপসুল/ঔষুধ খেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগ সম্পূর্ণ সেরে যায়। ভিটামিন-এ এর অভাবে হলে রাতকানা সহজেই ভালো হয়।

রাতকানা-রোগ-কি-ভাল-হয়

তবে যদি রাতকানার কারণ হয় ক্যাটারাক্ট (ছানি পড়া), রেটিনার অসুখ বা বংশগত সমস্যা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভিটামিন-এ খেয়ে পুরোপুরি ভালো হয় না। চোখের জটিল রোগ বা বংশগত কারণে হলে স্থায়ী সমাধান কঠিন হতে পারে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

রাতকানা রোগের জন্য কোনটি দায়ীঃ

রাতকানা রোগের লক্ষণ কি সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে জেনেছি। কিন্তু আমরা জানি না যে এই রাতকানা রোগ কেন হয় কিংবা এই রোগের জন্য কি দায়ী থাকে আমাদের শরীরের। তাহলে দেখুন?রাতকানা রোগের জন্য প্রধানত ভিটামিন-এ এর ঘাটতি দায়ী। ভিটামিন-এ আমাদের চোখের রেটিনায় রড সেলস (Rod Cells) সক্রিয় রাখে, যা অন্ধকারে বা কম আলোতে দেখার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই রোগ রেটিনাইটিস পিগমেন্টেসারের মতো রোগের কারণে হয়ে থাকে এই সব রোগ।

শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ না থাকলে এই কোষগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে রাতকানা রোগ হয়। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কোনো রোগ বালাই হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। এই সব দিক খেয়াল রাখতে হবে আমাদেরকে।

লেখকের মক্তব্যঃ

আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন রোগের ক্ষেত্রে আমাদের শরীরে রাতকানা রোগের লক্ষণ কি কি হয়ে থাকে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়।

প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।

আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com



( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।

comment url