এ আই কিভাবে কাজ করে - এ আই কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিতভাবে জেনে নিন?
আজকে আমরা জানবো যে আমাদের নিত্যদিনের কাজকে সুবিধা করার জন্য এ আই কিভাবে কাজ করে ও কি কি করতে পারে। ও তার সাথে সাথে এটাও জানবো যে এ আই কত প্রকার ও কি কি। যেটি আমরা ব্যবহার করে আমরা আমাদের কাজ সুবিধা করতে পারবো। আসুন জানি?
ভূমিকাঃ
আজকের দিনে পৃথিবীর সকল মানুষ কম বেশি অনলাইন দুনিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে আছে। আর এই অনলাইনকে আরো সুবিধা করে দিয়েছে এ আই আসে আমাদের জীবনে। যেটি ব্যবহার করে আমরা ঘণ্টার কাজ কিছু মিনিটে করতে পারছি।
![]() |
এ-আই-কিভাবে-কাজ-করে |
তাই আসুন জেনে রাখি যে, আমাদের জীবনে এই এ আইকে কিভাবে ব্যবহার করে আমরা আমাদের কাজ কামকে আরো ইজি করতে পারবো। এর সাথে এ আই কিভাবে কাজ করে ও এই এ আই কত প্রকার ও কি কি সব বিষয় নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো?
এ আই কিভাবে কাজ করেঃ
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) এমন একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা করে। নতুন কিছু শিখায় এবং যেকোনো বিষয়ের ওপরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এআই মূলত বিভিন্ন তথ্য বা ডেটা বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করে। এটি অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের মতোই শেখে, তবে সেটা করে অ্যালগরিদম, মেশিন লার্নিং (Machine Learning), নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং ডেটা প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে। এ আই মূলত একটি রোবট দ্বারা সমৃধ।
যেমন, আপনি যদি একটি এআই প্রোগ্রামকে অনেকগুলো ছবি দেখান, সে নিজে নিজেই শিখে নিতে পারে কোনটা মানুষ, কোনটা গাছ, কোনটা গাড়ি। একইভাবে, চ্যাটবট বা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (যেমন Siri, Alexa) আপনার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে উত্তর তৈরি করে। এআই এর পেছনে থাকা প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত বিশাল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সেখান থেকে নির্ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে, এটি মানুষের কাজকে সহজ, দ্রুত এবং অনেক ক্ষেত্রেই আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলছে।
এ আই কত প্রকার ও কি কিঃ
এ আই কিভাবে কাজ করে সেটি আমরা উপরের তথ্য থেকে কিংবা নিচে আসতে আসতে জানছি। কিন্তু আমরা এ আই এর প্রকারভেদ জানি না। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রধানত তিন প্রকার হয়ে থাকে। নিম্নে দেখে নিন?
- সংকীর্ণ বা নিযুক্ত এ আই (Narrow AI / Weak AI)
এই ধরনের এ আই ব্যবহার দ্বারা একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি হয় এবং শুধুমাত্র সেই কাজেই দক্ষ হিসাবে তাদেরকে তৈরি করা হয়।। যেমনঃ
- ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (Siri, Alexa)
- গুগল ম্যাপ
- ফেইসবুকের ফেস রিকগনিশন
- চ্যাটবট
এটি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে না, শুধু নির্ধারিত কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
- সাধারণ এ আই (General AI / Strong AI)
এই ধরনের এ আই এখনো গবেষণার পর্যায়ে আছে। এটি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং একাধিক জটিল কাজ নিজে নিজে শিখে করতে পারবে। এই হিসাব করে তাকে তৈরি করা হচ্ছে। যেমনঃ
- এটি মানুষের সমতুল্য বুদ্ধিমত্তার একটি স্তর অর্জন করবে বলে আশা করা হয়।
- এর ফলাফল এখনো গবেষণার কাছে দেখা যাই নি তাই এখন পর্যন্ত বাস্তবে এর ব্যবহার নেই।
- এ আই (Super AI):
- এটি ভবিষ্যতের একটি কল্পিত ধারণা, যেখানে এ আই মানুষের থেকেও অনেক বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে।
- এই এ আই নিজে নিজে আবিষ্কার করতে পারবে, আবেগ বুঝতে পারবে, এবং এমনকি নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এটি এখনো বাস্তব নয়, তবে বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আই দিয়ে কি কি কাজ করা যায়ঃ
এ আই কিভাবে কাজ করে সেটি আমরা ভালকরে বুঝে ফেলেছি। কিন্তু আমরা এটা জানি যে এই এ আই এর পাওয়ার কত? এখনকার দিনে এ আই দিয়ে কম বেশি সব কাজ করে ফেলছে মানুষ। তার কিছু নুমুনা দেওয়া হলো নিম্নে দেখুন?
১। ভয়েস রিকগনিশন (যেমন: Siri, Google Assistant)
২। ছবি চেনা (Face Recognition)
৩। স্পিচ-টু-টেক্সট কনভার্ট করা
৪। টেক্সট-টু-স্পিচ তৈরি
৫। স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ (Google Translate)
৬। অটোমেটিক ইমেইল ফিল্টারিং (স্প্যাম ডিটেকশন)
৭। চ্যাটবটের মাধ্যমে কাস্টমার সার্ভিস
৮। ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাপ (Alexa, Bixby)
৯। স্বাস্থ্য সেবায় রোগ শনাক্তকরণ (AI Diagnosis)
১০। MRI ও CT Scan বিশ্লেষণ
১১। ডেটা অ্যানালাইসিস
১২। ডিজিটাল মার্কেটিং অটোমেশন
১৩। সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট সাজেশন
১৪। ভিডিও রিকমেন্ডেশন (YouTube, Netflix)
১৫। কণ্ঠস্বর অনুকরণ (Voice Cloning)
১৬। SEO অপটিমাইজেশন
১৭। রোবটিক প্রসেস অটোমেশন (RPA)
১৮। সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি (Self-driving cars)
১৯। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
২০। স্মার্ট হোম সিস্টেম (Smart Lights, AC, Door Lock)
২১। মিথ্যা তথ্য শনাক্তকরণ (Fake News Detection)
২২। ফিনান্সিয়াল ফ্রড ডিটেকশন
২৩। স্টক মার্কেট প্রেডিকশন
২৪। বিজ্ঞাপন টার্গেটিং
২৫। কাস্টমার বিহেভিয়ার অ্যানালাইসিস
২৬। ই-কমার্স রিকমেন্ডেশন (Amazon Suggestion)
27। প্রোডাক্ট রিভিউ অ্যানালাইসিস
২৮। কন্টেন্ট অটোমেশন (AI Article Writing)
২৯। গ্রাফিক ডিজাইন (AI Image Generator)
৩০। অ্যানিমেশন তৈরি
৩১। ছবি এডিটিং (AI Retouch)
৩২। মুভি স্ক্রিপ্ট লেখা
৩৩। গান তৈরি (AI Music Composer)
৩৪। মডেল ট্রেনিং ও প্রেডিকশন
৩৫। হিউম্যান রিসোর্সে অটোমেটেড CV স্ক্যানিং
৩৬। স্কুলে ছাত্রদের প্রগ্রেস বিশ্লেষণ
৩৭। প্রশ্ন তৈরি ও উত্তর বিশ্লেষণ
৩৮। লেখার ভুল ঠিক করা (Grammar Checker)
৩৯। কোড অটোকমপ্লিট (GitHub Copilot)
৪০। সাইবার সিকিউরিটিতে থ্রেট ডিটেকশন
৪১। আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশন
৪২। ডাক্তারি পরামর্শ বট
৪৩। কৃষিতে ফলন পূর্বাভাস
৪৪.।আবহাওয়া পূর্বাভাস
৪৫। রোবট নিয়ন্ত্রণ
৪৬। হোটেল বা টিকিট বুকিং সিস্টেম
৪৭। অটোমেটেড কাস্টমার ফিডব্যাক বিশ্লেষণ
৪৮। আইনি পরামর্শ ও ডকুমেন্ট রিভিউ
৪৯। শিক্ষায় ব্যক্তিগত পাঠ পরিকল্পনা তৈরি
৫০। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণ (Predictive Analytics)
৫১। স্বাস্থ্যসেবা এ আই ব্যবহার করা হচ্ছে এখানকার দিনে।
৫২। মানুষ তার জীবনে বিনোদন নেওয়ার জন্য এ আই ব্যবহার করছে।
এআই এখন প্রায় সব সেক্টরে ব্যবহারযোগ্য – স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা, কৃষি, আইন, বিনোদন, যোগাযোগ—সব জায়গাতেই এর প্রভাব স্পষ্ট। প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে, এআই দিয়ে কাজের পরিধি ততই বিস্তৃত হচ্ছে।
এ আই কিভাবে ব্যবহার করবোঃ
এ আই কিভাবে কাজ করে ও এ আই দিয়ে কিভাবে নিজের কাজকে সহজ করা যায়। আজকের দিনে এটি একটি ছেলে খেলার মতো হয়ে গেছে। এ আই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে আপনি কোন কাজের জন্য এটি ব্যবহার করতে চান। আজকাল অনেক সহজ এ আই টুল ও অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যেগুলো মোবাইল বা কম্পিউটার থেকেই ব্যবহার করা যায়। যেমন, লেখা তৈরি করতে চাইলে আপনি ChatGPT, Grammarly, Jasper AI ব্যবহার করতে পারেন।
ছবি তৈরি করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন DALL·E বা Canva-এর AI টুল। ভয়েস থেকে লেখা বা অনুবাদ করতে চাইলে Google Translate, Google Voice Typing বা Microsoft Translator সহজ সমাধান। ব্যবসার কাজে ডেটা বিশ্লেষণ করতে চাইলে Power BI বা Tableau-এর মতো AI-পাওয়ারড সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত এসব টুলের ওয়েবসাইটে গিয়ে একাউন্ট খুলে বা অ্যাপ ডাউনলোড করে সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্তা প্রযুক্তি কিসের মাধ্যমে কাজ করেঃ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) প্রযুক্তি মূলত ডেটা, অ্যালগরিদম এবং মেশিন লার্নিং এর সমন্বয়ে কাজ করে থাকে। এটি মানুষের মতো চিন্তা, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, তবে তা হয় বিভিন্ন ধরণের গণনামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রথমে কিছু বিশাল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করে থাকে। তারপর সেই ডেটাকে বিশ্লেষণ করার জন্য অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয় – যা এক ধরনের নির্দিষ্ট নিয়ম বা নির্দেশনা। এরপর মেশিন লার্নিং ও ডিপ লার্নিং প্রযুক্তির সাহায্যে এ আই
সিস্টেমটি নিজে নিজেই শেখে এবং সময়ের সঙ্গে আরও বেশি স্মার্ট হয়ে ওঠতে সক্ষম। এতে নিউরাল নেটওয়ার্ক নামক পদ্ধতিও ব্যবহার হয়, যা অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের কোষের মতো করে কাজ করে। এ আই দ্বারা আপনি কম্পিউটারের প্রোগ্রাম আরো আপডেট করতে পারবেন। অ্যালগরিদম দ্বারা আপনি যেকোনো ভাষা কিংবা ল্যাঙ্গুয়েজ পরিবর্তন করতে পারবেন। এক কথায় এ আই দ্বারা এখন কম-বেশি সন কাজ সক্ষম।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধাঃ
এ আই কিভাবে কাজ করে ও এর সুবিধা গুলো কি কি পাওয়া যাবে সেটি আমাদের আজকের বিষয়ের আলোচনায় থাকবে। সময় যত যাচ্ছে তত পৃথিবীর চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনে ঘন্টার কাজ মিনিটে করা নিচ্ছে মানুষ। সেটি আবার অনলাইনে বসে থেকে এ আই এর মাধ্যমে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ আই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বর্তমান যুগে প্রযুক্তির এক অসাধারণ অর্জন, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক সুবিধা দিচ্ছে। এর মূল সুবিধা হলো দ্রুততা ও নির্ভুলতা। মানুষ যেখানে ভুল করতে পারে, সেখানে এআই নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে।
এআই দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করানো যায় যেমনঃ ডেটা বিশ্লেষণ, রিপোর্ট তৈরি, চ্যাটবট দিয়ে কাস্টমার সার্ভিস, ২৪ ঘন্টা কাজ করালে সে ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে, মানুষের চিন্তা আপডেট করতে সক্ষম। এতে সময় ও শ্রম দুটোই বাঁচে। শিক্ষা ক্ষেত্রে, AI-ভিত্তিক অ্যাপ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে শেখাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যখাতে, রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে AI দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত দিতে পারে। ব্যবসায়, ক্রেতার আচরণ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞাপন দেখানো বা বিক্রয় কৌশল নির্ধারণে এআই দারুণ ভূমিকা রাখে।
এছাড়া ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (যেমন: Siri, Alexa), গুগল ম্যাপ, অটোমেটেড গাড়ি, অনুবাদ অ্যাপস এ সবই আমাদের জীবনকে সহজ করছে এ আই-এর মাধ্যমে। এক কথায়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সময় বাঁচায়, খরচ কমায়, ভুলের হার কমায় এবং আমাদের আরও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
লেখকের মক্তব্যঃ
আসা করি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন অনলাইনের দুনিয়ায় এই এ আই কিভাবে কাজ করে ও কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। ও তার সাথে সাথে এটাও জানলেন যে এ আই কত প্রকার ও কি কি।
প্রশ্ন থাকলে কিংবা ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করবেন আপনার প্রিয় মানুষের সাথে।
আরো কিছু জানতে বা শিখতে চাইলে ভিজিট করুন.................. www.stylishsm.com
( আপনার প্রিয় ব্লগার স্টাইলিশ )
স্টাইলিশ এস এম নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হবে।
comment url